কেন্দ্রীয়ভাবে ৩ স্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা তিন স্তরে আয়োজন করা হবে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে কেন্দ্রীয়ভাবে। আগামী সেপ্টেম্বরে আবেদন কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা গেছে।
ইউজিসি থেকে জানা গেছে, চলতি বছর (২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষ) থেকে দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রকৌশলী এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একদিন করে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে আলাদা দুটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে। এসব কমিটির একাধিক উপকমিটি থাকবে। সেসব কমিটি আবেদন, ভর্তি পরীক্ষা, খাতা মূল্যায়ন ও ফলাফল প্রকাশ কার্যক্রম করে কেন্দ্রীয় কমিটির হাতে তুলে দেবে। কেন্দ্রীয় কমিটি সকল কার্যক্রম মনিটরিং করবে।
তবে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অভিজ্ঞ এবং সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার জন্য পৃথক পৃথক তিনটি কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠন করা হবে। এ তিন শাখায় তিনদিন পৃথক পৃথক ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির কাজ শেষ হবে।
জানা গেছে, পরবর্তীতে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রচলিত পদ্ধতিতে (কিংবা যেভাবে তারা উপযুক্ত মনে করেন) তাদের নিজ নিজ প্রয়োজনীয় শর্ত সংযোজন করে পৃথক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। নতুন করে আর পরীক্ষা না নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় পাওয়া স্কোরকে বিবেচনা করেই শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। প্রত্যেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র থাকবে। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী অভিন্ন প্রশ্নে পছন্দ করা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি তাদের পরীক্ষা নেয়ার সামর্থ্যের অতিরিক্ত আবেদন পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে মেধাক্রমানুযায়ী নিকটতম বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ভর্তি কমিটি ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত আরোপ করার সুযোগ পাবে।
বিশেষায়িত বিভাগগুলো যেমন- স্থাপত্য, চারুকলা ও সংগীত তাদের প্রয়োজনমত শুধুমাত্র ব্যবহারিক পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার স্কোর সংযুক্ত করেই মেধাতালিকা তৈরি করা হবে।
ইউজিসি আরও জানায়, বিশবিদ্যালয়গুলোর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং পঠন-পাঠন প্রক্রিয়ার ভিন্নতা সত্তে¡ও তাদের ভর্তি পরীক্ষা কেবলমাত্র এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়গুলোর ভিত্তিতেই গৃহীত হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিতে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি গঠন করা হবে। উচ্চ মাধ্যমিক ফল প্রকাশের পর পরই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির দেয়া সময় অনুযায়ী তাদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের একটি স্কোর দেবে।
তবে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার আওতায় আসার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) অংশগ্রহণের বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। গতকাল বুধবার ইউজিসিতে আয়োজিত এক বৈঠকে এ বিষয়ে একমত পেষণ করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরা সভা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানানো হয়েছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ভর্তি প্রক্রিয়ায় উল্লেখিত চার বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
সবাই কেন্দ্রীয় ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন ইউজিসির চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ। তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, কেন্দ্রীয় ভর্তি কার্যক্রম নিয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিমত পোষণ করেনি। ঢাবি, বুয়েট, চবি ও জাবি বলেছে, একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এ প্রক্রিয়ার বাইরে কেউ থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, এটির আওতায় আনতে তাদের (চার বিশ্ববিদ্যালয়) সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আগামী ২৬ ফেব্রæয়ারি আবারও এই চার বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকজন উপাচার্যকে ডাকা হয়েছে। আশা করি সেই সভায় সকল আশঙ্কা কেটে যাবে। তার পরও যদি কেউ না আসতে চায় তবে তাদের বাইরে রেখে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। এতে করে জাতির কাছে তারা চরমভাবে সমালোচনার সম্মুখীন হবে।
বর্তমানে প্রচলিত ভর্তি পরীক্ষায় ভর্তির সময়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক ভোগান্তি এবং আর্থিক ব্যয় নিরসনে এবং বিশ্বায়নের এ যুগে উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নে এ ধরনের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি ¯্রহণের উদ্যোগ যুক্তিযুক্ত কারণেই গ্রহণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান।