কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল পশুহাট চালুর উদ্যোগ
পবিত্র ঈদুল আজহায় বিভিন্ন হাট ঘুরে পছন্দের পশু কেনা চিরায়ত এক ঐতিহ্য। এখন এই হাটে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে খামার থেকেই লাখো পশু বিক্রি করছেন ব্যাপারীরা। ঘরে বসে পছন্দের পশু কিনতে পারছেন ক্রেতারা। আধুনিক এই ব্যবস্থাপনার নাম ‘ডিজিটাল পশুহাট’।
২০২০ সালের ঈদুল আজহার সময় দেশে ডিজিটাল হাটের আনুষ্ঠানিক বিকাশ ঘটে। গত বছর এই হাট জনপ্রিয়তা বা মানুষের আস্থা বাড়ে। ফলে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে চারগুণের বেশি পশু বিক্রি হয়েছিল। এবার আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ডিজিটাল হাটের প্রস্তুতি চলছে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ডিজিটাল হাটের প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় এবার আট থেকে ১০ গুণ বেশি পশু অনলাইনে বেচাকেনার সম্ভাবনা রয়েছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ জুলাই দেশে ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে।
এবার কোরবানির পশু বিক্রির জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ডিজিটাল হাট’ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগের এটুআই, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, একশপ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। সম্প্রতি এই বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। গত বছর ই-ক্যাব, বিডিএফএ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পৃথকভাবে ‘ডিএনসিসি ডিজিটাল হাট’র আয়োজন করেছিল। এবার পশুহাটের পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করবে সরকার।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে দেশের সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ভিত্তিক অনলাইনে গবাদিপশু বিক্রি করতে বিভাগীয় কমিশনারদের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া অনলাইনে পশুর ছবি আপলোড করার আগে গবাদিপশুর স্বাস্থ্য সনদ নিতে হবে। এটি দেবেন সংশ্লিষ্ট ভেটেরিনারি সার্জনেরা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অনলাইনে গবাদিপশু বিক্রির জন্য খামারিদের সংশ্লিষ্ট অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযোগে সহযোগিতা করবে এবং আপলোড করার ক্ষেত্রে মালিকের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, গবাদিপশুর বয়স, ওজন, মূল্য ও ছবি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ৩ জুলাই ডিজিটাল হাটের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।
ডিজিটাল হাট: করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ এবং ২০২১ সালে পশুর হাট ডিজিটাল পদ্ধতিতে করতে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। সে অনুযায়ী এবার কেন্দ্রীভাবে ‘ডিজিটাল পশুহাট’ চায় সরকার। এ জন্য digitalhaat.gov.bd ওয়েবসাইট চালু করেছে আইসিটি বিভাগ। এই ওয়েবসাইটে ‘নিরাপদ থাকাটাই জরুরি এখন, হাটে না গিয়েও হাট যখন তখন’, ‘এক ক্লিকে হাট থেকে হাতে’, ‘ডিজিটাল হাট থেকে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে কিনতে পারেন পছন্দের কোরবানির পশু’- এমন স্লোগানে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এই ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা যায়, এরইমধ্যে এই ওয়েবসাইটে দেশের বিভিন্ন এলাকার ৬৩টি পশুর খামার যুক্ত হয়েছে। পশুর ক্যাটাগরিতে গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, উট, মহিষ রাখা হয়েছে। ক্রেতাদের যে পশু পছন্দ, ক্যাটাগরিতে ক্লিক করলেই বিস্তারিত তথ্য পাচ্ছেন।
গরু ক্যাটাগরিতে (দেশি ষাঁড়) ৮১৬ কেজি ওজনের একটি গরুর ছবি দিয়েছে ঢাকার ধামরাইয়ের বরাকৈর কুল্লার এসএস এগ্রো কমপ্লেক্স লিমিটেড। গরুটির দাম চাওয়া হয়েছে চার লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা (একদাম)। সেখানে লেখা, ‘নিজস্ব খামারে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক নিয়মে ধানের কুড়া, গমের ভুসি, অ্যাংকর ডালের ভুসি, ছোলার ভুসি, ঘাস, ও খড় খাওয়ানো হয়। কোনো ধরনের মোটাতাজাকরণের ওষুধ বা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয় না। এমনকি মোটাতাজাকরণে কোনো ধরনের ফিড খাওয়ানো হয় না। অর্থ্যাৎ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়।’
ই-ক্যাবের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর আলম শোভন বলেন, ডিজিটাল গরুর হাট সবার জন্যই উন্মুক্ত একটা প্ল্যাটফর্ম। বিডিএফএ’র অধীনে দেশব্যাপী অনেক উদ্যোক্তা রয়েছেন। এই প্রান্তিক খামারিদের আমরা ‘ডিএনসিসি ডিজিটাল হাটে’ যুক্ত করছিলাম। এবার সরকার কেন্দ্রীভাবে ডিজিটাল হাটের আয়োজন করেছে। এখানে লেনদেন পদ্ধতি খুবই স্বচ্ছ, প্রতারণার সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে এই হাটের আরও প্রসার ঘটবে।
তিনি বলেন, এবার ই-ক্যাব ডিজিটাল হাটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। প্রান্তিক খামারিদের সমন্বয়ের কাজটা করবে ই-ক্যাব। এ ছাড়া স্লটারিং সেবা (জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াকরণ) চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ই-ক্যাব।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারির কারণে সরকার অনলাইনে গবাদিপশুর ক্রয়-বিক্রয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। ডিজিটাল হাট বাস্তবায়নে সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে ডিএনসিসি। এর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় আরও গুরুত্ব পাবে। মানুষের সময় বাঁচবে এবং করোনার বিস্তার রোধ হবে।
এই বিষয়ে জানতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি উপজেলায় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জনরা গবাদিপশু অনলাইনে আপলোডের আগে স্বাস্থ্য সনদ দেবে। এ ছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে খামারিদের সংযুক্ত করা এবং ওজন অনুযায়ী পশুর দাম নির্ধারণের বিষয়ে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর ব্যবস্থা নেবে। এজন্য খামারিদের ডাটাবেজ তৈরি করেছে সংশ্লিষ্ট প্রাণিসম্পদ দপ্তর। খামারিরা যাতে অনলাইনে তাদের গবাদিপশু সহজে বিক্রি করতে পারেন সেজন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।