কুয়েট শিক্ষক মৃত্যুতে ৪ ছাত্রকে আজীবন বহিষ্কার, ৪৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি
ফুলবাড়ীগেট প্রতিনিধি
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় ছাত্রলীগের কুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদকসহ ৪ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া আরও ৭ শিক্ষার্থীর দুই শিক্ষাবর্ষ বহিষ্কারসহ মোট ৪৪ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ৪৮ পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র শৃংখলা কমিটির বৈঠকে পর্যালচনা শেষে ৪ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিস্কারসহ ৪৪ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয় এবং বুধবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত হয়েছে।
আজীবন বহিষ্কার হওয়া ৪ শিক্ষার্থীরা হলেন ছাত্রলীগ কুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান, হাসান আব্দুল কাইয়ুম, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান রাজ্জাক ও রিয়াজ খান নিলয়। দুই শিক্ষাবর্ষ ও আবাসিক হল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন মোঃ তাহমিদুল হক ইশরাক, মাহমুদুল হাসান, মোঃ সাদমান সাকিব, মাহিন মুনতাসির, এ এস এম রাগিব আহসান মুন্না, মীর জামিউর রহমান, রুদ্রনীল সিংহ শুভ। এক শিক্ষাবর্ষ বহিষ্কার হয়েছেন আনিকুর রহমান। এছাড়া ২২ শিক্ষার্থীকে এক শিক্ষাবর্ষের জন্য বহিস্কার করা হয়েছে। তবে আপাতত তা স্থগিত থাকবে। ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন কোন ধরনের অপরাধে জড়িত প্রমাণিত হলে এই শাস্তি বলবৎ হবে।
আরও ১০ শিক্ষার্থীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তারা হলেন আহসানুল আবেদীন, কবির হোসেন, মোঃ শুভ মন্ডল, শাহরিয়ার আহমেদ মুশফিক, ফয়সাল কবির ফাহিম, শাফিন আহমেদ অনন্ত, মোঃ আদনান ইসলাম, সাকিব সরদার, সানজিদুল ইসলাম ও মোঃ সাদাফ হেলাল।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার আনিছুর রহমান বলেন, ঘটনার দিন ঐ শিক্ষককে বাড়ি যাওয়ার পথে গতিরোধ ও তাঁকে তার কক্ষে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে। এছাড়া তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট আরও কিছু ঘটনায় শৃঙ্খলা কমিটি এই শাস্তি প্রদান করেন।
জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর দুপুর ৩টার দিকে কুয়েটের ইইই শাখার প্রফেসর ও লালন শাহ হলের প্রভোষ্ট ড. মোঃ সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে সেলিম হোসেন কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর মানসিক নিপিড়নের শিকার হয়েছিলেন। এতে অভিযুক্ত কুয়েট ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদকসহ ৯ জনকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়। লালন শাহ হলে ডিসেম্বর মাসে ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচন নিয়ে ড. সেলিম হোসেনকে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল।
এদিকে প্রফেসর ড. সেলিমের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে ২ ডিসেম্বর থেকে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। পরে ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় ৪৪ জন শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়। পরে ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি তাদেরকে শোকজ করে। সভায় কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা না হলেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ছাত্রদের কোনও প্রোগ্রাম নিতে হলে আগে ছাত্র কল্যাণ পরিষদ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কুয়েট ক্যাম্পাসে থাকা সকল রাজনৈতিক ব্যানার-পোস্টার অপসারণ করা হবে। সভায় প্রফেসর ড. সেলিম হোসেনের চাকরিকালীন পাওনাদি দ্রæত পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একইসঙ্গে তার স্ত্রীর চাকরির বিষয়ে আগামী সিন্ডিকেট সভায় আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ ঘটনায় কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ^াস এর নিকট তাদের কর্মসূচীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে সাধারণ সভায় সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরা হবে। সাধারণ সভা শেষে শিক্ষক সমিতির অবস্থান জানানো হবে।