কুষ্টিয়ায় কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, ভিডিও ভাইরাল
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
কুষ্টিয়ার মিরপুরে ‘সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে’ ইমন আলী নামে এক কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র থেকে ২০ নভেম্বর (বুধবার) ওই ছাত্রকে মিরপুর হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের। তবে সিসি টিভির ফুটেজ দেখে পরিবারের দাবি ইমনকে পিটিয়ে ও ইনজেকশন পুশ করে হত্যা করা হয়েছে। ইমন উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের কাদেরপুর গ্রামের এজাজুল আজিম রিপনের ছেলে ও রাজশাহী সিটি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।
জানা যায়, গত ১৯ নভেম্বর দুপুরে কুষ্টিয়ার মিরপুরের মাদকাসক্ত ছাত্র ইমন আলীকে ভর্তি করা হয় মিরপুর বিজিবি সেক্টর এলাকার সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। মানসিক (মাদকের কারণে) সমস্যাজনিত কারণে তাকে ওই কেন্দ্রে ভর্তি করে পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ফিরে যান। পরদিন ২০ নভেম্বর সকালে ইমনের পরিবারকে জানানো হয় তাকে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে। সেখানে ইমনের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন গিয়ে দেখতে পান সে আর বেঁচে নেই। পরিবারের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার ছয়দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। এতে দেখা যায়, কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বেশ কয়েকজন ইমনকে হাত-পা বেঁধে মারধর করছে, শরীরে পুশ করা হচ্ছে ইনজেকশনও। এরপরই মিরপুরে তোলপাড় শুরু হয়।
জানা যায়, ইমনের মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়নি। তাকে নির্যাতন করেই মেরে ফেলা হয়েছে। ইমনের মা কামরুন্নাহার বলেন, ইমনকে সুস্থ অবস্থায় ওখানে রেখে আসা হয়েছিল। পরে তাকে নির্যাতন করে ওরা হত্যা করেছে। ইমনের বাবা এজাজুল আজিম রিপন বলেন, ইমনের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির দাবি করছি।
মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. সেলিম উদ্দিন ফারাজি বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই ইমনের মৃত্যু হয়। ইমনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল বলে মনে হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ছাড়া মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা সম্ভব না। এদিকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই ওইদিন ইমনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর এবং তাকে দাফন করা হয়।
মিরপুর ‘সমর্পণ’ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের মালিক আব্দুল মতিন বলেন, এটা একটা দুর্ঘটনা মাত্র। পাগলামি শুরু করলে তাকে শান্ত করতেই ওইভাবে বেঁধে রাখা হয়েছিল। সকালে ইমনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়।
ইমনকে দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ইনজেকশন দিয়ে নৃশংসভাবে নির্যাতন করছে এমন চিত্র ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার বিষয়টি জানালে এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি আব্দুল মতিন।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) এম জাবিদ হাসান বলেন, আমরা নিহতের পরিবারকে ওইদিনই থানায় অভিযোগ দায়ের করার জন্য বলেছি। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমি নিজেও দেখেছি। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।