কুমিল্লায় নিহত ১৩ শ্রমিকের সাতজনই স্কুলছাত্র
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
কুমিল্লায় ট্রাক উল্টে নিহত ১৩ শ্রমিকের মধ্যে সাতজনই নীলফামারীর দুটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী; যারা পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে দিনমজুরি করে পরিবারকে সহযোগিতা করত। শুক্রবার ভোরে কুমিলার চৌদ্দগ্রামে একটি ইটভাটার কয়লাবাহী ট্রাক উল্টে শ্রমিকদের থাকার ঘরের ওপর পড়ে তাদের মৃত্যু হয়। সবার বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি ও তার পাশের নিজপাড়া গ্রামে। জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ হাট বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নিহতদের মধ্যে পাঁচজন তার বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।
তারা হল নিজপাড়া গ্রামের মানিক চন্দ্র রায়ের ছেলে তরুণ চন্দ্র রায় (১৫), রাম প্রসাদ চন্দ্রের ছেলে বিপ্লব কুমার রায় (১৫), অমল চন্দ্র রায়ের ছেলে প্রশান্ত রায় দীপু (১৫), জগদীশ চন্দ্র রায়ের ছেলে মৃণাল চন্দ্র রায় (১৬) ও জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো. সেলিম (১৫)।
অন্য দুইজন শিমুলবাড়ি এসসি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক জ্যোতিশচন্দ্র রায়। তারা হল শিমুলবাড়ি গ্রামের খোকারাম রায়ের ছেলে বিকাশ রায় ও শিমুলবাড়ি গ্রামের অমল চন্দ্র রায়ের ছেলে মনোরঞ্জন রায়। তারা লেখাপড়ার খরচ জোগাতে ও পরিবারকে সহযোগিতার জন্য মাঝেমধ্যে দিনমজুরি করত বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
সেলিমের মেজো ভাই শাহাজাদ বলেন, তাদের বাবা রিকশা চালান। তার আয়ে কোনোমতে চলে সংসার। তিন ভাইয়ের মধ্যে বড়জন বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা। আমি আর ছোট ভাই সেলিম বাবা-মায়ের সংসারে। পরিবারে অভাব-অনটনের মধ্যে আমরা দুই ভাই লেখাপড়া করি। বাবা সংসারের খরচ জোগালেও আমরা নিজেদের পড়ালেখার খরচ নিজেরাই জোগাই। কখনও আমি কখনও সেলিম কাজ করে টাকার দরকার হলে।
‘জ্ঞানের আলো বাড়াতে গেলেও তার জীবনের আলো নিভে গেল’ বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিহতদের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
নীলফামারীর জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, নিহত ১৩ শ্রমিকের পরিবারের জন্য কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ২০ হাজার টাকা করে পাঠিয়েছেন। নীলফামারী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে।