কীসের ভিত্তিতে দুর্নীতির হিসাব টিআইকে দুদক চেয়ারম্যান
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কীসের ভিত্তিতে বাংলাদেশে দুর্নীতির হিসাব কষেছে, সে তথ্য-উপাত্ত জানতে চেয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রতিরোধের প্রধান দায়িত্ব পালনকারী সংস্থাটির প্রধান মনে করেন, দুর্নীতি কমা-বাড়া সংখ্যা দিয়ে বোঝানো যথেষ্ট নয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় ইকবাল মাহমুদ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, টিআইকে আমরা আগেও বলেছি যে, আপনারা আপনাদের রিপোর্টের ম্যাথডোলজি আমাদের জানান এবং ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগার দিয়ে বলেন। এবার আমরা পত্রিকায় দেখেছি এই এই সংখ্যা, নাম্বার। এই নাম্বারই যথেষ্ট না। আপনাকে ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগার দিয়ে বলতে হবে, দুর্নীতি এইভাবে হয়েছে।
বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের ২০১৮ সালের দুর্নীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টিআই মঙ্গলবার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে সূচকের ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভাল থেকে খারাপ) বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৪৯ নম্বরে।
গতবার বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৩ নম্বরে। এবার তার চেয়ে পিছিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে দুর্নীতি বাড়ার ইঙ্গিত দেয়। তবে টিআই বলছে, প্রতিবছর দেওয়া তাদের প্রতিবেদন দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করে না, একটা ধারণা দেয় মাত্র। সরকারি খাতের দুর্নীতি নিয়ে ১৩টি জরিপ ও বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে এবারের প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, তারা শুধু বলেছে দুর্নীতি কমেনি বেড়েছে, আমরা আশা করব রিপোর্টে থাকবে যে দুর্নীতি কেন কমেনি, বেড়েছে। দুর্নীতি বাড়ার কারণ কী? সেই কারণগুলো অ্যাড্রেস করার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন? যদি টিআই রিপোর্টে সেটা না থাকে, তাহলে এই রিপোর্ট কোনোক্রমেই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
কোনো কোনো গবেষণা ‘বায়াজড’ হয়ে থাকে মন্তব্য করেই তিনি বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনকে তিনি পক্ষপাতমূলক বলতে চাইছেন না।
টিআই বলুক যে অমুক জায়গায় অমুক সরকারি লোক, ওই সরকারি কর্মকর্তা-রাজনৈতিক ব্যক্তি ক্ষমতা দিয়ে ওই কাজ করেছে। সেটা তো আমাদের জন্য সুখকর হয়। এখন তারা যদি সেটা না করে শুধু বলে যে, সরকারি সম্পত্তি বেহাত হয়েছে; এসব কথা তো আমরা নিজেরাও বলতে পারি এই হয়েছে, সেই হয়েছে, অনেক কথা বলতে পারি।
টিআই’র প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান না করলেও বাংলাদেশে দুর্নীতির পরিস্থিতি ‘নিম্নগতির দিকে’ বলে দাবি করেন ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, কাউকে যদি বলা হয়, ভাই দুর্নীতি আছে কি না? তখন সে বলবে, হ্যাঁ অনেক দুর্নীতি। কিন্তুও এটা তো সত্য সারাদেশের দুর্নীতি ব্যাপারে জনসাধারণ সচেতন হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং যারা দুর্নীতির কাছাকাছি থাকেন, যাদের সুযোগ থাকে, আমরা তো মনে করে তারা অনেক সচেতন হয়েছে। এই সচেতনতায় প্রমাণ করে যে দুর্নীতি আসলে নিম্নগতির দিকেই। দুর্নীতি নিয়ে টিআইয়ের প্রতিবেদন আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাব ফেলে বলে প্রতিটি দেশের ‘কনটেক্সটে’ আলাদা গবেষণা করা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন ইকবাল মাহমুদ।
সংস্থাটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশকে (টিআইবি) নিজেদের সহযোগী উলেখ করে তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, লোকাল টিআইকে বলব, আপনারা অন্ধভাবে টিআইয়ের যে ম্যাথডলজি ইন্টারন্যাশনালি ইউজ করে, সেটা যে সবচেয়ে ভালো, তা না। প্রত্যেক দেশের যে কনটেক্সট, সেই কনটেক্সট অনুসারে টিআই রিচার্চ করেছে কি না, আমার ধারণা নেই। টিআইয়ের রিপোর্ট পেলে আমরা জানাব।
দুদক দুর্নীতি প্রতিরোধ কাজে দুর্বল প্রতিষ্ঠান ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না- টিআইবির এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমাদেরকে দুর্বল বলাটা, উনারাই দুর্বল। আজ পর্যন্ত আমরা কখনও বলিনি যে আমরা স্বাধীন নই। আমরা অ্যাবসলিউটলি স্বাধীন। সেই কারণে আইনি ম্যান্ডেট নিয়ে যাচ্ছি, কেউ তো আমাদের বাধা দিচ্ছে না।
তবে বড় দুর্নীতিবাজদের ধরতে না পারার সমালোচনা মেনে নিয়ে তিনি বলেন, এটা সত্য। উদাহরণ স্বরূপ বলি- দুর্নীতিবাজ যদি লন্ডনে বসে থাকে, যেমন লুৎফর রহমান বাদল (আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক পরিচালক), তিনি বিদেশে বসে আছেন, তারে আমি কেমনে ধরি? আমি তো মামলা করলাম, এটা একটা অ্যাকশন।
টিআইবিকে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ভালো কাজের প্রশংসা করার আহ্বানও জানান দুদক চেয়ারম্যান। শুধু খারাপ দিকটাই বলতে থাকেন, তাতে ভালো কাজ হয় না। টিআইবি তখন ভালো প্রতিষ্ঠানে পরিগণিত হবে, যখন ভালো-খারাপ দুইটাই বলবে।
দুর্নীতি দমনে সবার সহযোগিতা চেয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনকে দিয়ে দুর্নীতি কমানো সম্ভব না। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।