কিরগিজস্তানে সরকার হটিয়ে বিরোধীদের ক্ষমতা দখলের দাবি
কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মধ্য-এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তানের বিরোধীদলগুলো ক্ষমতাসীন সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলে নেয়ার দাবি করেছে। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে মঙ্গলবার রাজধানী বিশকেকে ব্যাপক বিক্ষোভের মাঝে দেশটির একাধিক সরকারি ভবন নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর এই দাবি করেছে তারা। এর আগে, দেশটির পার্লামেন্ট ভবন ও প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিরোধীরা।
প্রেসিডেন্ট সুনোরবাই জিনবেকোভ বলেন, দেশ একটি অভ্যুত্থান চেষ্টার মুখোমুখি হয়েছে। তারপরও তিনি বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি না ছুড়তে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশ দেন। মধ্য-এশিয়ার এই দেশটিতে রাশিয়ার একটি সামরিক বিমান ঘাঁটি ও কানাডা নিয়ন্ত্রিত বিশাল স্বর্ণ খনি রয়েছে।
দেশটির সরকার বলছে, রাতভর বিক্ষোভে একজন নিহত ও আরও ৫৯০ জন আহত হয়েছেন। বিরোধীরা বলেছেন, দুর্নীতির দায়ে বন্দি দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিরোধীদলীয় নেতা আলমাজবেক আতামবায়েভকে মুক্ত করেছেন তারা। এছাড়া অস্থায়ী সরকার গঠনের জন্য তারা ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন।
সদ্য বন্দিদশা থেকে মুক্ত হওয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট আতামবায়েভ কী দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। এছাড়া বর্তমান প্রেসিডেন্ট সুনোরবাই জিনবেকোভ ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবেন কিনা সেব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনও আলামত দেখা যায়নি।
চীন সীমান্তের এই দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে; মস্কো, ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের দীর্ঘদিনের ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অন্যতম কেন্দ্র। দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার ইতিহাস রয়েছে; গত ১৫ বছরে কিরগিজস্তানের অন্তত দু’জন প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভের দাবানলে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন।
রাজধানী বিশকেকের প্রাণকেন্দ্রে মঙ্গলবার সকালের দিকে হাজার হাজার মানুষ সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। পরে বিক্ষোভ থেকে হোয়াইট হাউস নামে পরিচিত পার্লামেন্ট ভবনের দখল নেন তারা। পার্লামেন্টের কিছু অংশে আগুনও ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা; যদিও জরুরি সার্ভিসের সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছেন।
পার্লামেন্ট ভবনে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। সরকারি বিভিন্ন দফতরের নথিপত্র, অফিসের আসবাবপত্র রাস্তায় নিক্ষেপ করেন তারা। পরে সেগুলোতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
দেশটির বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার নিজ দফতরে যাননি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা কুরসান আসানোভ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেছেন।
ওই মুখপাত্র বলেছেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, সংঘর্ষ প্রতিরোধ এবং লুটপাট ঠেকাতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
গত রোববার দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট সুনোরবাই জিনবেকোভ পুনরায় জয়ী হয়েছেন বলে বিরোধীরা দাবি করেছেন। নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে সোমবার থেকে বিক্ষোভ করে আসছেন বিরোধীরা।
রোববার রাজধানী বিশকেকসহ দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে বিরোধীদলীয় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, ও গরম পানি নিক্ষেপ করে। এতে বিরোধীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। নির্বাচনী ফলাফল বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার রাতভর বিক্ষোভ করেন বিরোধীরা।