December 22, 2024
আঞ্চলিক

কাজ না করেই বিল উত্তোলনের পায়তারা , কপোতাক্ষ পাড়ে আবারও বন্যার আতংক!

 

তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বালিয়া ভাঙ্গনকূল টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় ৪ কোটি ৮২ লাখ ২৩ হাজার ১৯১ টাকার কাজে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পে কোন রকম দায়সারা ভাবে কাজ করে প্রকল্প সম্পন্ন করতে যাচ্ছে সেখানকার কথিত বালিয়া ভাঙ্গনকূল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ। ফলে কপোতাক্ষ পাড়ের ঐ এলাকার মানুষের মাঝে আইলা, সিডর এর মত প্রলয়কারী জলোচ্ছাসের আতংক রয়েই গেল।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের ৪ কোটি ৮২ লাখ ২৩ হাজার ১৯১ টাকা ব্যয়ে উপজেলার বালিয়া, ডুমুরিয়া, শাহাজাতপুর ও খেশরা এলাকার বেড়িবাঁধের ভাঙ্গনরোধ ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ৫২ টি এলসিএস দলের অধিনে ১১০০ শ্রমিকের ৪ মাসের মধ্যে টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। যার মধ্যে ১২ কিঃমিঃ ভেড়িবাঁধ এবং ৭.৫ কিঃমিঃ খাল খননের কাজ ছিলো। এছাড়া ঠিকাদারের মাধ্যমে ৩টি রেগুলেটর, ৪টি পাইপ ¯øুইস এবং সমিতির অফিস ঘর নির্মাণ কাজ উল্লেখ করা হয়। যেটি বাস্তবায়নে বালিয়া ভাঙ্গনকূল (এসপি নং-৬১০০১) সাব প্রজেক্ট হাতে নেন। যা ঐ বছরের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অদ্যবধি শেষ করা হয়নি। তবে যেটুকু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তা অপরিকল্পিত এবং টেকসই না হওয়ায় সন্তুষ্ট নন সংশ্লিষ্ট দপ্তর সহ স্থানীয় এলাকাবাসী। কাজের বিপরীতে ৩০ শতাংশ টাকা উত্তোলিত হলেও বিল পাননি এলসিএস দল সহ শ্রমিকরা ।

তবে এ কাজে অনিয়মের জন্য এলসিএস দলের একটি বড় অংশ অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন বালিয়া ভাঙ্গনকুল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতির দিকে। কাজ শেষ না করেও সম্প্রতি আরও একটি বিল উত্তোলন করতে যাচ্ছেন সভাপতি এমন অভিযোগ করেন এলসিএস দলের সদস্যরা।

অভিযোগে প্রকাশ, প্রকল্প বাস্তবায়নে নথি নং-৪৬.০২.০০০০.১৪.০০৩.১৭.৩২০ এর অধিকাংশ শর্ত পূরণ করেনি প্রকল্প বাস্তবায়ন বালিয়া ভাঙ্গনকূল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ। বিশেষ করে পাবসস কতৃক গঠিত মান নিয়ন্ত্রণ উপ-কমিটি উপ-প্রকল্পের গুণগতমান গাইড লাইন অনুযায়ী তদারকি ও অবকাঠামো গত বাস্তবায়নে যথাযথভাবে গুণগতমান নিয়ন্ত্রনে  নজরদারি ছিলনা প্রকল্পে।

এছাড়া নথি নং-৪৬.০২.০০০০.১৪.০০৩.১৭.৩২১ এর শর্তানুযায়ী এলসিএস দ্বারা মাটির কাজ বাস্তবায়ন, অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে পূর্ত কাজের বিল পরিশোধ, ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বাঁধ ও খালের মাটি কাজের টপ, বটম, হাইট, এবং ¯েøাপ,রেফারেন্স লাইন এর কাজ বাস্তবায়ন, ডিজাইনের বাইরে কাজ না করাসহ বিভিন্ন শর্ত থাকে।

এদিকে বালিয়া ভাঙ্গনকুল কাগুজে উপ-প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও আশংকামুক্ত নয় ঐ এলাকা। তবে সমিতির (এলসিএস)একাংশের দাবি, ১২ কিঃমিঃ ভেড়িবাঁধ নির্মাণ হওয়ায় তারা সুফল ভোগ করতে শুরু করেছেন। এছাড়া খাল খননে পানি নিষ্কাশনের সমস্যা দূর হওয়ায় ১৫০ হেক্টর নিচু জমিতে এখন ফসল ফলছে বলে দাবি করা হলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। তবে এলাকাবাসীর আশংকা, বর্ষার আগে রেগুলেটর নির্মাণের কাজ শেষ না হলে পুরো এলাকা ফের পানিতে তলিয়ে থাকবে। বর্ষা মৌসুমের আগে ঠিকাদার রেগুলেটর নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারলে এ অঞ্চলের দুর্যোগ ঝুঁকি অনেকটা নিরসন হবে। তাদের ধারণা, ২৪০০ পরিবারের ৯০০ হেক্টর জমির উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, স্বার্থক হবে সরকারের প্রায় ৫ কোটি টাকার প্রকল্প।

অন্যদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এলসিএস গ্র“পের একটি অংশ খুশী হলেও অপর বড় অংশিটির পাশাপাশি খুশী হতে পারেনি সাধারণ এলাকাবাসী।

জোনা খাল ২ নং এলসিএস দলের মফিজুল মোড়ল জানান, তাদের দলের ২২ জন শ্রমিক ১ বছর আগে সাড়ে তিন লক্ষ টাকার কাজ শেষ করেছে। অথচ টাকা পেয়েছে মাত্র দেড় লক্ষ। বাঁধ নির্মাণ ৪ নং এলিএস এর সভাপতি বাবলুর রহমান শেখ জানান, তার দল এক বছর আগে ৪.৫ লক্ষ টাকার কাজ শেষ করলেও এ পর্যন্ত মাত্র দেড় লক্ষ টাকা পেয়েছে। আরও কয়েকজন এলসিএস দলের সভাপতি ও সম্পাদক একই অভিযোগ করেন। এনিয়ে এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, প্রকল্পে এলসিএস দলগুলোর মাধ্যমে ঝুঁড়ি-কোদাল দিয়ে মাটি কর্তনের কথা থাকলেও মাটি কর্তন ও বাঁধ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে স্কেভেটর।

এ প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা বালিয়া ভাঙ্গনকুল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, ৫২ টি এলসিএস দলের মধ্যে ৪৪ টি দল জুন ২০১৮ এরমধ্যে তাদের কাজ শতভাগ সম্পন্ন করেছে। প্রতিকূল অবস্থার কারণে ৮ টি এলসিএস দল গত বছর কাজ শেষ করতে পারেনি। এ মাসের মধ্যে তাদের কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তবে তার এমন বক্তব্য বাস্তবতাকে বহুলাংশে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। প্রকৃত পক্ষে এলসিএস সদস্যরা নামমাত্র লোক দেখানো কাজ করলেও মূলত যেটুকু কাজ হয়েছে তার সিংহ ভাগই করা হয়েছে স্কেভেটর দিয়ে।

তালা উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ মোঃ জসিম জানান, সরেজমিন গিয়ে কাজের অনেক ত্রæটি পেয়েছি, যে কাজ গুলো সিডউল’এ থাকার পরেও করা হয়নি, তার বিল তারা পাবে না।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুমার কুন্ডু বলেন, প্রক্রিয়া শেষ হলেই এলসিএস দলের সদস্যরা বকেয়া টাকা পাবেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *