কাঁচা চামড়া রপ্তানির জন্যই কারসাজি : রিজভী
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
কাঁচা চামড়া রপ্তানির পথ খুলতেই কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে ‘কারসাজি’ হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেছেন, তা না হলে দেশের ট্যানারি শিল্প ক্ষতির মুখে পড়বে।
রিজভী বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য না পেয়ে যখন দেশের মানুষ চামড়া মাটিতে পুঁতে দিল, ঠিক তখনই পানির দরে কেনা কাঁচা চামড়া রপ্তানির ঘোষণা দেওয়া হলো।
যেমন করে ধান পুড়িয়ে অন্য দেশ থেকে আনা চাল খেতে হয়েছে, ঠিক তেমনি করেই চামড়া শিল্প ধ্বংস করে পানির দরে কেনা কাঁচা চামড়া প্রতিবেশী দেশে রপ্তানি করতে হচ্ছে। বাংলাদেশে চামড়াজাত দ্রব্য তৈরি করতে ট্যানারিগুলোর চামড়ার যে চাহিদা, তার বড় অংশই মেটে কোরবানির পশু থেকে।
কোরবানির পশুর চামড়া মূলত কেনেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া যায় আড়তগুলোতে, সেখান থেকে চামড়া কেনেন ট্যানারি মালিকরা। এবার কাঁচা চামড়ার দর দেখে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া সড়কে ফেলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছেন। এই অবস্থায় সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আড়তদাররা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও একে দেশের শিল্প হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা ট্যানারি মালিকদের। সংবাদ সম্মেলনে এসে ট্যানারি মালিকদের কথার প্রতিধ্বনি করেন বিএনপি নেতা রিজভী।
তিনি বলেন, সরকার কাঁচা চামড়া বিদেশে রপ্তানির সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সবই ছিল পূর্ব পরিকল্পিত এবং সিন্ডিকেটের লুটপাটের জন্য কারসাজি। আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা সরকারকে কাঁচা চামড়া রপ্তানির নীতি থেকে সরে আসার আহবান জানাচ্ছি।
এনিয়ে বিএনপির কোনো কর্মসূচি থাকবে কি না- প্রশ্ন করা হলে রিজভী বলেন, আমরা প্রথমে প্রতিবাদ করছি, সকলকে অবহিত করছি। আমরা দেখি সরকার তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে কি না? তারা কী করে সেটা দেখে আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।
কাঁচা চামড়ার বাজারে কারসাজিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা জড়িত বলে দাবি করেন রিজভী। এর সাথে আওয়ামী লীগের একজন এমপি জড়িত এবং ক্ষমতাসীন দলের আরও অনেকে জড়িত।
কাঁচা চামড়া রপ্তানি হলে দেশের শিল্প সঙ্কটে পড়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানি হলে শতভাগ দেশীয় শিল্প অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে এবং এই শিল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। বেকার হয়ে পড়বে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিপুল সংখ্যক মানুষ। শুধু তাই নয়, কোরবানির সময়ে দানে কাঁচা চামড়াগুলো দিয়েই মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো চলে। তারা এবার বিপাকে পড়েছে।
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি নেতা বলেন, ট্যানারি শিল্প, যেটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসাবে বিকাশ লাভ করেছিলো সেটিও এই সরকারের ভুলনীতির কারণে পরমুখাপেক্ষী নীতির কারণে আজকে ধ্বংসের প্রান্তে চলে গেছে। শেয়ারবাজারের ধস তখনই হয়, যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম, সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, টিএস আইয়ুব, আমিনুল ইসলাম, আয়শা সিদ্দিকা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নজরুল ইসলাম।