কলারোয়ায় একই পরিবারের ৪ জনকে জবাই করে হত্যা
* ভাগ্যক্রমে বেঁচে থাকা ৪ মাসের মেয়ের দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক
* হত্যকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমেছে পুলিশের একাধিক টিম
আব্দুল গফুর ও শেখ কামরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার কলারোয়ার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামে একই পরিবারের স্বামী স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েসহ ৪ জনকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। হত্যার আগে অথবা পরে তারা কয়েকজনের হাত পা বেধে রেখে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে কোন একসময় এই ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- খলসি গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে হ্যাচারি মালিক মোঃ শাহীনুর রহমান (৪০) তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০), ছেলে সিয়াম হোসেন মাহী (৯) ও মেয়ে তাসমিন সুলতানা (৬)। হত্যাকারীরা ওই পরিবারের ৪ মাসের শিশু মারিয়াকে হত্যা না করে ফেলে রেখে যায়।
স্থানীয়রা জানান, ভোরে তারা ওই বাড়ির চিৎকার চেচামেচি শুনে ছুটে যান। পরে দরজা খুলে দেখতে পান সাবিনা খাতুন ও তার দুই শিশু তাসনিম ও মাহী একঘরে এবং আরেক ঘরে শাহীনুরের জবাই করা লাশ।
একই পরিবারে থাকা শাহীনুরের ছোটভাই রায়হানুল ইসলাম জানান, তিনি গোঙানির শব্দ শুনে ছুটে যান। পরে সবাইকে খবর দেন। তিনি জানান, হত্যাকারীরা সিড়ির ঘর দিয়ে ঢুকে তাদের খুন করে দরজায় শিকল দিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়। সকাল ১০টা পর্যন্ত লাশগুলো ঘরেই ছিল। সেখানে পুলিশের ক্রাইম সেকশন কাজ করছে বলে সংবাদকর্মী ও অন্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
রায়হানুল ইসলাম আরও জানান, তার বড়ভাই শাহীনুর ইসলাম নিজস্ব ৭-৮ বিঘা জমিতে পাঙ্গাস মাছ চাষ করতেন। গত ২২ বছর ধরে তাদের পারিবারিক সাড়ে ১৬ শতক জমি নিয়ে নিকট প্রতিবেশী ওয়াজেদ কারিগরের ছেলে আকবরের সাথে মামলা চলছিল। এই মামলা ও পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে বলে তার ধারণা।
পরিবারের স্বজনরা জানান, শাহীনুরের বাবা ডা. শাজাহান আলী কলারোয়ার দামোদরকাটী গ্রামের নূর আলীর ছেলে জনৈক আকবর হোসেনের কাছ থেকে ৩৪ শতক জমি ক্রয় করেন। এই জমির ক্রেতা ছিলেন ডা. শাজাহান ও তার প্রতিবেশী ওয়াজেদ আলীর ছেলে আকবর। এদিকে, একই পরিবারের ৪ জনকে হত্যার ঘটনায় পরিবারের স্বজনদের মাঝে চলছে শোকের মাতম। গোটা উপজেলা ব্যাপী নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
ঘটনাস্থলে এসে জানা গেছে, জীবিত থাকা একমাত্র শিশুকন্যা মারিয়া সুলতানা (৪মাস) কে স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুন নিয়ে যান। পরে তিনি তাকে আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করেন।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্বে) হারান চন্দ্র পাল জানান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানসহ আমরা সকলেই ঘটনাস্থলে রয়েছি। এখন পর্যন্ত লাশ ঘর থেকে বের করা হয়নি। হত্যার প্রাথমিক কোন কারনও জানা যায়নি। ঘটনাস্থলে সিআইডি, গোয়েন্দা পুলিশ, ডিএসবি, র্যাব এবং অন্যান্য গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন। সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের ধারেই অবস্থিত এই বাড়িতে এখন শত শত লোক ভিড় করছেন।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এই দুঃখজনক ঘটনার তদন্তে নেমেছি আমরা। হত্যাকরীদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ঘাতক যেই হোক তারা রক্ষা পাবে না। এদিকে ৪ মাস বয়সী শিশুটির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। তিনি শিশু মারিয়া সুলতানাকে ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনের কাছে জিম্মায় রেখেছেন। এখন থেকে তার চিকিৎসা এবং জীবন গড়ার যাবতীয় দায়িত্ব জেলা প্রশাসক গ্রহণ করেছেন বলে ঘটনাস্থলে যেয়ে তিনি ঘোষণা দেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত শাহীনুরের মা শাহিদা খাতুন (৬০) আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। শাহীনুরদের তিন ভাইয়ের এক ভাই আশরাফুল মালয়েশিয়া থাকেন। তাদের বোন আছিয়া খাতুন বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন। তিনি বলছেন, আমার মা ও আরেকটা ভাই এখানে থাকলে তাদেরকেও খুন করতো সন্ত্রাসীরা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে যায় সন্ত্রাসীরা। বিদেশে থাকায় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রানে বেঁচে যান। তিনি এই নৃশংস হত্যাকান্ডকে সেই ঘটনার সাথে তুলনা করেন।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ