কলারোয়ার কোঠাবাড়িতে কালের স্বাক্ষী ৫শ’ বছরের বটগাছ তীর্থস্থানে পরিণত
কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কোঠাবাড়ি গ্রামে ৫০০ বছরের বটগাছটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে গাছটি মারা যাওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। গাছটির অলৌকিক উপকারিতায় প্রতি শুক্রবার সকালে কোঠাবাড়িসহ জেলা ও পার্শ্ববর্তী যশোর জেলার লোকজন গাছটির পদধুলি নেন। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা দুরদূরান্ত থেকে এসে ওই বঠগাছের গোড়ায় পানির বোতল রেখে দিচ্ছে। সেই পানি পান করলে তাদের রোগবালাই সেরে যাচ্ছে। তাছাড়া অনেকেই এ গাছটির গোড়ার মাটি নিয়ে রোগ মুক্তির জন্য সারা শরীরে মাখেন। তাতেও তাদের রোগ সেরেও যাচ্ছে। যে কারণে বটগাছটি এলাকাবাসির তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে।
উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের কোঠাবাড়ী গ্রামের বৃদ্ধ নূরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, আমি আমার জন্মের পর থেকে এই বটগাছটি যেমন দেখছি, ঠিক তেমন অবস্থায় এখনও রয়েছে। তিনি আরও জানান,আমি যুবক থাকাকালে আমাদের কোঠাবাড়ি গ্রামের বৃদ্ধ দাদুদের কাছে শুনেছি একই কথা। তাদের ধারণা বটগাছটির বয়স ৫০০ বছরও ছাড়িয়ে গেছে।
গাছটির পূর্ব পাশের বাড়ীয়ালা আফিলউদ্দীন বলেন, এ গাছে অসংখ্য প্রজাতির পাখির বাস আছে। এ গাছটির পাখির বসবাস যেন অভয় আশ্রম। তবে সন্ধ্যার পর থেকে পাখির কোলাহল শোনা যায়। কিন্তু গাছটি কে বা কারা লাগিয়েছেন তার কোন সঠিক হিসেব জানাতে পারেননি তিনিসহ এলাকার কেউ। গত ৬ জানুয়ারি ২০২০ বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, আশ্চর্যজনক এ বটগাছটি দেখার জন্য শতশত দর্শনার্থী প্রতি সপ্তাহে শুক্রবারে মানুষের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে কোঠাবাড়ি গ্রাম।
স্থানীয় বাসিন্দা লাল্টু হোসেন বলেন, গাছটিকে ঘিরে অনেক গল্প কাহিনী ছোট বেলা থেকে গ্রামের অনেকের কাছ থেকে শুনে আসছি। অনেকেই এ গাছটির গোড়ার মাটি নিয়ে রোগ মুক্তির জন্য সারা শরীরে মাখেন। রোগ মুক্ত হয় কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভক্তিতে মুক্তি। হয়তো তাদের মনের বাসনা পূর্ণ হয়। তাই মানুষ দূরদুরান্ত থেকে ছুঁটে আসেন এক টুকরো মাটি নেওয়ার জন্য। বিশেষ করে প্রচুর গরমের সময় এখানে আসলে এ বটগাছের বিশাল সুশীতল ছায়াতলে যে কোন পথিক কিংবা দর্শনার্থী বিমোহিত হয়ে ওঠেন বলে জানান লাল্টু হোসেন। উপজেলার দেয়াড় ইউনিয়নের খোরদো গ্রামের হাফিজুর গাছটির অলৌলিকতার কথা শুনে গাছটি দেখতে এসে বলেন, তিনি আশ্চর্যজনক বটগাছটিকে দেখে অভিভূত হয়েছেন। হাফিজুর রহমান তিনি আরো বলেন আমি অনেক স্থানে বেড়িয়েছি কিন্তু এমন দৃষ্টি নন্দন গাছটি কোথাও দেখেনি। তিনি আরো বলেন-কোঠাবাড়ীর বটগাছ ও কুষ্ঠি পাথর সরকারের পক্ষ থেকে রক্ষণাবেক্ষনের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে হয়তো কালের স্বাক্ষী হিসেবে এ গাছটি দেখার জন্য নজর কাড়বে।
কোঠাবাড়ী গ্রামের সরদার আনছার আলী জানান-এই কোঠাবাড়ীর বটতলায় রয়েছে দুইটি বড় কুষ্ঠি পাথর ও দুটি ছোট পাথর। যারা দাম কোটি টাকারও উপরে বলে তিনি বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে থেকে শুনেছেন। ওই গামের এক মহিলা একটি ছোট পাথ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন তার বাড়ীতে ঘরের পুটনিতে দেবেন বলে। কিন্তু পাথর নিয়ে তিনি কিছু যেতে না যেতেই মুখ দিয়ে রক্ত উঠে রাস্তায় মারা যান। এপরে ওই পাথরের দাম কোটি টাকার উপরে বলে এলাকায় প্রচার হয়। পরে বিডিআর সদস্যরা জানতে পেরে ২টি গাড়ি নিয়ে আসেন। তারা পাথরগুলি উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা পাথর গুলি ওই জায়গা থেকে একবিন্দু নাড়াতে পারেন নি। সেই থেকে ওই জায়গায় পাথর গুলি পড়ে রয়েছে। বিভিন্ন লোক কোঠাবাড়ী ঘুরতে এসে পাথরে চুমা খায়, ধুলা বালি নিয়ে যায়। আবার হিন্দুদের পূজা করতেও দেখা যায়। এই পাথরে রয়েছে অলৌকিক শক্তি। বর্তমানে অরক্ষিত কোটা বাড়ীর ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। স্থানীয়রা ইট, গাছপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এক্ষুনি সরকারের পক্ষ থেকে কোটাবাড়ী সংরক্ষণের প্রয়োজন। তা না হলে কোঠাবাড়ীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। এলাকাবাসী সরকারের পক্ষ থেকে কোঠাবাড়ী সংরক্ষণের দাবী জানিয়েছেন।