কর্মীরা বাঁচলেই আ’লীগ বাঁচবে : ওবায়দুল কাদের
নগর ও জেলা আ’লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন
জয়নাল ফরাজী
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘নেতাদের ছবি, বিলবোর্ড প্রদর্শন করে নেতা হওয়া যায়না। নেতা হতে গেলে নেতৃত্বের প্রমাণ দিতে হবে, কর্মীদের ভালবাসতে হবে। কারণ কর্মীরা বাঁচলেই আওয়ামী লীগ বাঁচবে।’
আগামী কমিটিতে দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে উলেখ করে তিনি বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেন পর কর্মীদের ভালবাসার কারণেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কারামুক্ত হয়েছিলেন। আর যারা বসন্তের কোকিল তারা বসন্ত চলে গেলে পালিয়ে যাবে। সুতরাং পকেট কমিটি বানাবেন না। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে ভাল নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে কমিটি করতে হবে।’
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিএনপিকে নিয়ে বিচলিত হওয়ার কারণ নেই। বিএনপি পথ হারানো পথিকের মতো দিশেহারা। ইতোমধ্যে দুই উইকেট পড়েছে, আরও পড়বে। আন্দোলনের ডাক দেয় শুনি, দেখতে দেখতে এগারো বছর। আন্দোলন হবে কোন বছর?’
মির্জা ফখরুলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিষয়ে বলেন- আমি শুধু হাসি, আঁখি জলে ভাসি। বিএনপি দেশকে দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন করেছিল। দুর্নীতির ভবন হাওয়া ভবন। বিএনপি এখন নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক। তাই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বিএনপিকে আর ক্ষমতায় আসতে দেবে না আওয়ামী লীগ।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ী, টেন্ডারবাজ, ভূমিদস্যু, দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীরা সাবধান। তাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার ডাইরেক্ট অ্যাকশন শুরু হয়েছে। কেউ বাদ যাবেন না। সবাই সতর্ক ও শুদ্ধ হয়ে যান। ঢাকার বাইরেও অ্যাকশন শুরু হবে। কে ধরা পড়বেন বলা মুশকিল। আওয়ামী লীগে দূষিত রক্তের প্রয়োজন নেই বরং বিশুদ্ধ রক্তের সঞ্চালন করতে হবে।’
প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পদ্মা সেতুর প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। বুধবার আরও একটি স্প্যান বসানো হবে। এছাড়া মেট্রোরেল, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সবই শেখ হাসিনার বহুমুখী উদ্যোগ। আজ দেশের যেদিকে যাবেন, সেদিকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ। ইউনিয়ন পর্যায়েও ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। দেশের ৯৪ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সেবা পাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান। তার উন্নয়নের ছোঁয়ায় খুলনার চিত্রও বদলে গেছে। খুলনাকে ইউরোপের একটি শহর মনে হচ্ছে। খুলনায় মানসম্মত হোটেল হয়েছে, পর্যটন নগরীতে পরিণত হয়েছে খুলনা। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। শেখ হাসিনার আস্থার প্রতিদান দিতে হবে।’
এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে স্বাগত বক্তৃতা করেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র ও বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হানিফ এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান।
সম্মেলনের প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল এমপি, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, মির্জা আজম এমপি, শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপি, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, হাবিবুর রহমান সিরাজ, এস এম কামাল হোসেন, এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি, আব্দুস সালাম মুর্শেদী এমপি, আকতারুজ্জামান বাবু এমপি, এ্যাড. গ্লোরিয়া ঝর্না সরকার এমপি।
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন পরিচালনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান এবং জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত অধিকারী। পরে একই স্থানে দ্বিতীয় অধিবেশনে নতুন নেতৃত্বে নির্বাচিত করা হয়।