January 20, 2025
আঞ্চলিককরোনালেটেস্ট

করোনা রুখতে খুলনায় চাহিদা বেড়েছে ইভারমেকটিন’র, সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

জয়নাল ফরাজী…

বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসেবে দেখা দেওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) এখনও পর্যন্ত কোন টিকা আবিষ্কার হয়নি। তাই এই রোগের চিকিৎসায় ম্যালেরিয়া, ইবোলা ও এইডসের মতো রোগের জন্য তৈরি টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে উকুন মারার ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হওয়া ইভারমেকটিন। করোনার রোগীর চিকিৎসায় বেশ কয়েকটি দেশে এটির সাফল্য পেলেও এর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এমনকি করোনার চিকিৎসায় এটি কতটা নিরাপদ ও কার্যকর সেটি এখনও প্রমাণিত নয়। তারপরেও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাহিদা বেড়েছে এ অ্যান্টি প্যারাসাইট ওষুধটির। যা নিয়ে সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনার চিকিৎসায় ইভারমেকটিনের কার্যকারিতার কথা নিশ্চিত করেছেন বেসরকারী হাসপাতাল বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেসিডিন বিভাগের প্রধান ডাঃ মোহাম্মদ তারেক আলম। তিনি জানিয়েছেন, আমরা বিস্ময়কর ফল পেয়েছি। করোনায় আক্রান্ত ৬০ জন রোগীর ওপর দুটি ওষুধ একসঙ্গে প্রয়োগ করার পর তারা সবাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নিয়মিত ব্যবহার হওয়া এ্যান্টিপ্রোটোজোয়াল মেডিসিন ইভারমেকটিনের এক ডোজের সঙ্গে একটি এ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন দেয়ার পর অনেকটা বিস্ময়কর ফল দেখা গেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের পর খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ওষুধটির চাহিদা বেড়েছে ব্যাপক হারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনার বিভিন্ন ফার্মেসিতে পূর্বের তুলনায় ব্যাপক হারে চাহিদা বেড়েছে অ্যান্টি প্যারাসাইট ওষুধ ইভারমেকটিনের। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধটি কিনে রাখছেন ক্রেতারা। আবার অনেকে করোনা আক্রান্ত না হলেও কিনেই সেবন করছেন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোন তোয়াক্কা করছেন না তারা। তাদের ভাষ্য, ওষুধটি ৭ দিনে ৭টি খেলে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না। আর হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফার্মেসিগুলোতে এ ওষুধটির সংকট দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে খুলনা কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির অবৈতনিক সম্পাদক এস এম কবির উদ্দিন বাবলু দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে বলেন, এর আগে কখনো ইভারমেকটিন এতটা বিক্রি হয়নি। ক্রেতারা এসে ওষুধটির নাম বলেই কিনে নিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু ওষুধটি নিষিদ্ধ না, সেহেতু আমাদের বিক্রিতে বাঁধা নেই। তবে কে কি কারণে খাচ্ছে সেটা তো তাদের বিষয়। তিনি আরও বলেন, হঠাৎ উকুন মারার এ ওষুধের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় খুলনার বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই ওষুধ এনে বিক্রি করতে হচ্ছে।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে বলেন, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোন ফার্মেসি অ্যান্টি প্যারাসাইট ওষুধটি বিক্রি করতে পারে না। এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওষুধটিকে করোনার প্রতিষেধক হিসেবে ঘোষণা করেনি। কিছু জায়গায় ওষুধটির সাফল্যের কথা শোনা গেলেও গবেষণায় প্রমাণ পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে। এর যেহেতু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, সেহেতু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা ঠিক না। এতে সুফলের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা অধিক। তাই জনসাধারণকে অহেতুক ওষুধটি সেবন করা থেকে বিরত থাকতে তিনি অনুরোধ করেন। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ওষুধটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগপর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক হিসেবে ওষুধটি ব্যবহার না করতে অনুরোধ জানানো হয়।

এ বিষয়ে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জিয়াউর রহমান দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে বলেন, অ্যান্টি প্যারাসাইট ইভারমেকটিন বাংলাদেশে বিক্রি নিষিদ্ধ না। তবে এটি করোনার প্রতিষেধক হিসেবেও এখনো প্রমাণিত হয়নি। তাই অনুমোদনের আগে এটি করোনার প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার না করাই ভালো।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *