করোনা মোকাবেলায় শেখ হাসিনার সময়োপযোগী নেতৃত্ব
মোঃ আশরাফুল ইসলাম : বাংলাদেশের সৌভাগ্য যে করোনার মতো বৈশ্বিক দূর্যোগের সময় দেশের হাল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে। চীন, আমেরিকা, ইংল্যন্ড, ইরান, ইতালি, স্পেনের মতো মহাশক্তিধর দেশগুলি যখন করোনার আঘাতে বিপর্যস্ত, শত শত মৃত্যু যেখানে দৈনিক হিসাব, সেখানে বাংলাদেশ করোনা প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত যে সফলতা দেখিয়ে চলেছে তা সম্ভব হয়েছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী নেতৃত্ব, দক্ষতা এবং জনগণের প্রতি ভালোবাসার কারণে, যে নেতৃত্ব, দক্ষতা এবং দেশপ্রেমের পরিচয় আমরা পেয়েছিলাম ১৯৯৮ সালে, যখন ৬৫ দিনের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় দেশের ৭৫ ভাগ অঞ্চল ডুবে গিয়েছিল, কৃষি এবং সার্বিক অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতি বিচেনায় বন্যা পরবর্তী দূর্ভিক্ষের আশংকা করা হয়েছিল এবং তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, দুই কোটি মানুষ মারা যাবে, আমরা দেখেছিলাম কী নজিরবিহীন নেতৃত্ব এবং দক্ষতায় সেই পরিস্থিতি সফলভাবে সামলেছিলেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি রোল মডেলে পরিণত করেছিলেন তিনি।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের সর্বোচ্চ উন্নত দেশগুলিও। তাদেরও রয়েছে প্রয়োজনীয় চিকিত্সা সরঞ্জাম এবং প্রতিরোধমূলক উপকরণের স্বল্পতা। করোনা মোকাবেলায় এ পর্যন্ত ইতালিতে মারা গিয়েছেন ১০০ জন ডাক্তার; আমেরিকা, ইংল্যন্ডেও প্রতিদিন অসংখ্য স্বাস্থ্য কর্মীর মৃত্যু ঘটছে। বিশ্বে সর্বেশেষ (১৬ এপ্রিল, রাত ৯টা) আক্রান্ত ২০, ৮৮,৮৬১ এবং মৃত্যু ১, ৩৪, ৭৫৫ এবং বাংলাদেশে যথাক্রমে ১৫৭২ এবং ৬০। করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশে প্রধান বাধা চিকিত্সা সরঞ্জামের স্বল্পতা নয়, জনগণের সচেতনার অভাবই প্রধান অন্তরায়। আমরা দেখছি করোনা প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সেটি বাস্তবায়ন করতে আমাদের প্রশাসন, পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে কতোটা কষ্ট করতে হচ্ছে। পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে করোনা প্রতিরোধে সামনের সারির যোদ্ধা ডাক্তার এবং নার্সদের জন্য করোনা আক্রান্ত হলে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা এবং মারা গেলে ২৫ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে দেশের অর্থ ব্যবস্থা চলমান রাখতে ঝুঁকি নিয়ে কর্মরত ব্যাংক কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্যও।
করোনা ভাইরাস সংক্রমনের প্রায় পাঁচ মাসে সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ অনেকটা সফলতা দেখিয়ে চলেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের কারণে। আমরা দেখছি, তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি অঞ্চলের মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি ও প্রয়োজন সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সর্বস্থরের প্রতিনিধি তথা প্রশাসন, পুলিশ, সামরিক বাহিনী, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ডাক্তার, নার্স এবং সাংবাদিকদের কাছ থেকে অবহিত হচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। সংকটের শুরু থেকেই তিনি শুধু করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ নয়, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ যাতে খাদ্য কষ্টে না থাকে সে ব্যবস্থাও নিয়েছেন, ব্যবস্থা নিয়েছেন মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলারও। প্রণোদনা ঘোষনা করেছেন পোষাক খাত, কৃষি, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প সহ ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি খাতের জন্য। ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ যাতে চরম অর্থনৈতিক সংকটে না পড়ে তাই ঋণের কিস্তি এবং সুদ প্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছেন। তাঁর নির্দেশনায় তাঁরই সুদক্ষ হাতে গড়ে উঠা আজকের জনবান্ধব প্রশাসন এবং পুলিশ বাহিনী হতদরিদ্র থেকে শুরু করে নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিচ্ছে। দরিদ্র মানুষ আজও ১০ টাকা কেজি চাল পাচ্ছে। রেশনিং সুবিধাভোগী ৫০ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি করেছেন।
দূর্নীতি বাংলাদেশে নতুন কোনো সংকট নয়। বরং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূর্নীতি বিরোধী সংকল্প এবং ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূর্নীতিগ্রস্ত দেশের কলংক কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। দূর্নীতির প্রশ্নে তিনি নিজের দল এবং সরকারের লোকদেরও ছাড় দেননি। করোনা মহামারি মোকাবেলায় গৃহীত ত্রাণ কার্যক্রমের শুরু থেকেই তিনি বারবার সতর্ক করেছেন, ত্রাণ নিয়ে দূর্নীতি করলে চরম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, চেয়ারম্যান বা মেম্বার মানেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যন মেম্বার নয়। তবে হ্যাঁ, দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় আজ অনেকেই নানান স্বার্থে আওয়ামীলীগের সুবিশাল ছায়াতলে এসে ঘাপটি মেরে আছে। আজ কারো কারো মনোভাব এমন যে, জনপ্রতিনিধি মাত্রই চোর এবং দেশ ও জনগণের প্রতি জনপ্রতিনিধিদের কোনো দায়িত্ববোধ ও মমত্ব নেই। আমরা যদি ১৫ এপ্রিল দৈনিক ইত্তেফাকের একটি অনলাইন সংবাদ দেখি, দেখা যাচ্ছে, মেম্বার থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য নিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সংখ্যা ৬১, ৫৭৯ জন, যাদের মধ্য থেকে ত্রাণ চুরি করে ধরা পড়েছে ১৪ জন, মোট সংখ্যার ০.০৩ শতাংশ। ধরলাম সংখ্যাটা ১৪ নয়, ৫০। এই ৫০ জনের চুরির সংবাদ বাংলাদেশের শতশত ইলেক্ট্রনিক এবং অনলাইন মিডিয়ার মধ্য থেকে মাত্র ২০ টির সংবাদ যদি আপনার চোখে পড়ে তাহলে একই ৫০টি ঘটনার কথা আপনি ৫০গুণ ২০ মানে ২০০ বার দেখলেন। এবং একই সংবাদ আপনার ফেসবুক বন্ধুদের মধ্য থেকে ১০ জন শেয়ার করলে একই ঘটনার সংবাদ বার বার দেখতে দেখতে আপনার মনে হতেই পারে, দেশে করোনা রোগীর থেকে চাল চোরের সংখ্যা বেশি।
জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার এবং প্রশাসন চোরের দলীয় পরিচয় বিবেচনা কখনো নেয়নি। যে গুটি কয়েক জনপ্রতিনিধির মুখোশধারী দূর্নীতিবাজের কারণে আজ কেউ কেউ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে কলংকিত করার অপচেষ্টা করছেন, তারা একটি বিষয় ভুলে যাচ্ছেন, ত্রাণের চাল যারা চুরি করছে তাদের কারো কারো গায়ে আওয়ামী লীগের দলীয় পরিচয় থাকলেও, আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনই কিন্তু সেই সব চোরদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করছে।
তাই আসুন, এই মহামারীর সংকট মোকাবেলায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ ও মমতাময়ী নেতৃত্বে আবারো আস্থা রেখে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মেনে চলি এবং মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই।
লেখকঃ সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ