November 23, 2024
করোনাজাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

করোনা ভ্যাকসিন তৈরির প্রযুক্তি হস্তান্তরের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের জন্য করোনা ভ্যাকসিনের প্রযুক্তি হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে ‘বিশ্ব জনপণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করার কথাও বলেন তিনি।

কোভিড-১৯ বিষয়ে শুক্রবার (০৪ ডিসেম্বর) শুরু হওয়া জাতিসংঘের ৩১তম বিশেষ অধিবেশনে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম)-এর বর্তমান চেয়ার আজারবাইজান এবং জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল  এ বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করেন।

আগে রেকর্ড করা এ ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য করোনা ভ্যাকসিন তৈরির প্রযুক্তি হস্তান্তর, সবার জন্য এ ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক সহায়তাসহ বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধির তাগিদ দিয়ে বলেন, কিছু অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে জরুরি মনোযোগ এবং আরো সহযোগিতা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের করোনা ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে গোটা বিশ্বের জন্য একটি ‘বৈশ্বিক জনপণ্য বিবেচনা করতে হবে। ডব্লিউএইচও’র অ্যাক্ট এবং কোভাক্স সুবিধার উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উন্নত দেশগুলোর ট্রিপস চুক্তির (ট্রেড রিলেটেড অ্যাসপেক্টস অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপারটি রাইটস) আওতায় আইপি রাইটস ওয়েভার ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে এবং সুযোগ পেলে ভ্যাকসিন তৈরি করতে প্রস্তুত রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, যথাসময়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ও সাশ্রয়ী মূল্যে সবার জন্য মানসম্মত ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ২০৩০ সালের উন্নয়ন এজেন্ডা সমতার নীতির মাধ্যমে পরিচালিত এসডিজি অর্জনে সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের মৌলিক ভূমিকার স্বীকৃতি দেয়। একইভাবে, যখন ভ্যাকসিন প্রাপ্তির কথা আসে, তখন কাউকে পেছনে রাখা ঠিক হবে না। এটি মহামারী পরাস্ত করতে, জীবন বাঁচাতে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে আমাদের সহায়তা করবে।

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধির তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ এর পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক সহায়তাসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলোকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। জাতীয় সরকারগুলোর পাশাপাশি জাতিসংঘ, আইএফআই, সুশীল সমাজকে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একে অপরের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্ব এখনো এ মারাত্মক ভাইরাস এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় এক কঠিন সময় পার করছে। এ প্রেক্ষাপটে এ অধিবেশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব বহন করে। কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

বিশ্বের সর্বত্র মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে কোভিড-১৯কে কখনোই কোনো একটি স্থানে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপ, বৈশ্বিক সংহতি এবং বহুপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় সবার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে।

সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত প্রায় ১৪ লাখ মানুষ করোনা মহামারীতে মারা গেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছেন। একই সঙ্গে এ মহামারী অনেক মানুষকে আরো দরিদ্র করে ফেলেছে এবং আরো অনেককে ক্রমে দারিদ্র্যের দিকে ঢেলে দিচ্ছে। সব দেশে অপুষ্টি, বৈষম্য ও ক্রমবর্ধমান অসমতা চেপে বসছে এবং শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অনেক দেশের কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাক্কার মুখোমুখি হওয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনা মহামারীর কারণে বাংলাদেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ আমাদের অর্থনীতি, আমাদের জীবন ও জীবিকা, আমাদের অভিবাসী জনগোষ্ঠীকে ব্যাপক প্রভাবিত করেছে এবং আমাদের কষ্টার্জিত উন্নয়নকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

করোনা মহামারীর ছোবল থেকে মানুষের জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে ১৪.৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ধাক্কা সামাল দিতে ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান শেখ হাসিনা।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *