January 21, 2025
জাতীয়লেটেস্ট

করোনা: পোশাকখাতে ২৪ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকার ক্রয়াদেশ বাতিল

বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ক্রেতারা ২৯১ কোটি মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় ২৪ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা, বিনিময় হার ৮৫ টাকা ধরে) তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে। একই সঙ্গে কমেছে চীন, ইউরোপ ও আমেরিকানির্ভর আমদানি-রপ্তানি।

বুধবার (১ এপ্রিল) তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

গত বছরের শেষদিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। যাতে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা। সবশেষ তথ্যানুযায়ী ভাইরাসটি এরইমধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২০৩টি দেশে ছড়িয়েছে।

বিজিএমইএয়ের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রেতারা ক্রয়ের স্থগিত আদেশ দিচ্ছে। বুধবার ১ এপ্রিল সকাল ১০টা পর্যন্ত দেশের তৈরি পোশাক খাতের এক হাজার ৬৮টি কারখানার রপ্তানি আদেশ বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯২ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজারটি পোশাক পণ্যের আদেশ বাতিল হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ ২ দশমকি ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় ২৪ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা, বিনিময় হার ৮৫ টাকা ধরে)। রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়া এসব কারখানায় ২১ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করেন বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য শতকরা ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। যা তারা পরে শোধ করবে। তাদের কোনো আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়নি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। যাদের কাজ আছে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গার্মেন্টস খোলা রাখতে পারেন।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ-এর সভাপতি রুবানা হক বলেন, বর্তমানে তৈরি পোশাক খাত গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। একের পর এক পোশাক কারখানার ক্রয়াদেশ বাতিল হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে এ খাত ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে। তাই কঠিন এ সংকটময় মুহূর্তে বায়ারদের ক্রয় আদেশ স্থগিত না করার আহ্বান জানিয়েছেন পোশাক মালিকরা।

পোশাক ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে আমেরিকা, ইউরোপ ও কানাডা লকডাউন হয়ে আছে। ফলে প্রত্যেক দেশের ক্রয় আদেশগুলো স্থগিত করে বার্তা পাঠাচ্ছে সেসব দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বড় সংকটের মুখে পোশাক খাত। দেশের রপ্তানি খাতের সিংহভাগ তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। তাই এ খাতের নেতিবাচক প্রভাব পুরো রপ্তানি বাণিজ্যে আঘাত হানবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিসহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে প্রভাব ফেলেছে। আমি এটাকে বলবো থ্রি টি। অর্থাৎ ব্যবসা-বাণিজ্য, রেমিট্যান্স, আমদানি ও রপ্তানি ক্ষেত্রে, ট্রান্সপোর্ট খাত ও ট্যুরিজম খাতে প্রভাব পড়েছে। এ কারণেই করোনা আমাদের অর্থনীতির জন্য হতাশার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইতোমধ্যে নিত্যপণ্যের বাজারমূল্য বেড়ে গেছে। সরকার এক্ষেত্রে সরবরাহ বাড়িয়ে বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পাশাপাশি সার্বিক অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা দিতে পারে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে বড় ধরনের হোঁচট খেলো পণ্য রপ্তানি আয়। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ২ হাজার ৬২৪ কোটি ১৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা কোনটাই স্পর্শ করতে পারেনি দেশের তৈরি পোশাক খাত। চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম। একইসঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। একক মাস হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩৩২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭২ কোটি ২০ লাখ ডলার।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *