করোনা দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় কঠোর অবস্থানে খুলনা প্রশাসন
২৫ দিনে ৭৭০ মামলায় ৩,৮৮,৮৯০ টাকা জরিমানা আদায় এবং ৩৮২ জন আটক
আলি আবরার
করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় বেশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে খুলনার প্রশাসন। প্রতিদিন দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা যেখানে বাড়তির দিকে, সে অবস্থায় অন্যান্য জেলার থেকে খুলনায় শনাক্তের সংখ্যাটি তুলনামূলকভাবে একটু কম । গত নভেম্বর মাস জুড়ে খুলনা জেলায় করোনায় শনাক্ত হয় ২০৭ জন এবং এতে মৃত্যু হয় ৮ জনের। মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ রোগে এখনো পর্যন্ত জেলায় মৃত্যু হার ১.৬২%। দ্বিতীয় ঢেউকে সামনে রেখে প্রশাসন কঠোর হলেও লোকজনের ভেতরে সেভাবে সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
বিশেষ করে ব্যস্ততম সড়কে, রেস্টুরেন্ট, বাস-যানবাহন এবং মার্কেটে খুব অল্প সংখ্যক মানুষকে নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে চলাফেরা করতে ও মাস্ক পরতে দেখা গিয়েছে। শনাক্তের সংখ্যাটি এখনো কম থাকলেও শীতের মধ্যে যে কোন সময় তা বেড়ে যেতে পারে। মাস্ক না পরাকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসনের বিশেষ অভিযানের পর থেকে শহরের মানুষের মধ্যে কিছুটা সচেতনতা লক্ষ্য করা গিয়েছে যা সবার প্রশংসা পেয়েছে।
এ বিষয়ে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছি সচেতনতার লক্ষ্যে। লিফলেট বিতরণ থেকে শুরু করে, মাইকিং, বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ ও প্রয়োজনে অভিযান চালাচ্ছি। রেস্টুরেন্ট ও শপিং প্লেসগুলাকে “নো মাস্ক নো সার্ভিস” নীতিমালা অবশ্যই মানতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন বাজার মালিক সমিতিকে আমরা করোনা প্রতিরোধে নীতিমালাগুলো অনুসরণ করতে বলেছি। এরপরও যদি সুনির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে তবে আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।’
আগামীতে লকডাউন আসবে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ‘এখন পর্যন্ত এমন কোন সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে নাই।’
খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডাঃ শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষার সাথে সাক্ষাতকালে তিনি জানান, ‘শীত আসার আগে গত নভেম্বরে করোনা শনাক্তের যে প্যাটার্ন পরিলক্ষিত হয়েছে তা বেশ চিন্তার বিষয়। তবে করোনার প্রথম ঢেউয়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চাই এবার। সবাইকে অবশ্যই বেশি করে হাত ধুতে হবে বাইরে থাকলে। এটা আসলেই দুঃখজনক যে মার্কেট-রেস্টুরেন্টগুলা ঠিকমত মেইন্টেইন হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবাই নিজেরাই যদি সতর্ক না থাকি তাহলে এই নিয়ম নীতিমালা বাস্তবায়িত হবে না। এখনো কোন ঝুঁকি না থাকলেও ১৭নং ওয়ার্ড একটু চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন করোনা জয়ী এই চিকিৎসক। এছাড়াও বিভিন্ন অফিস ও প্রতিষ্ঠানকে করোনা প্রতিরোধে নির্দিষ্ট নিয়ম নীতিমালা পালন করার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
বর্তমানে জেলায় বিদেশগামীদের নমুনা সংগ্রহের জন্য আলাদা করে সময় দেওয়া হয়েছে (৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত)। আর এখন থেকে এই নমুনার রেজাল্ট পাওয়া যাবে অনলাইনে।
খুলনা মেডিকেলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে খুমেকের উপাধ্যক্ষ ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ জানান, ‘খুলনা মেডিকেল দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় বেশ সক্ষমতা অর্জন করেছে। আগে মাত্র ১০টি আইসিইউ থাকলেও বর্তমানে তা ২০ বেডে উন্নীত করা হয়েছে এবং আরও ১০টি বেড আসছে। ভেন্টিলেটর ৪টি আছে এবং আরও ৫টি খুব দ্রুত সংযোজন করা হবে। ৩০টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা এবং ২৪টি অক্সিজেন কনসেন্ট্রটর যুক্ত হয়েছে। করোনা ইউনিটকে ডায়াবেটিস হাসপাতাল থেকে খুলনা মেডিকেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে ও এর বেড সংখ্যা ১৩৪টি। এছাড়াও ইউএনডিপি এর সহযোগিতায় অক্সিজেন প্লান্ট করা হচ্ছে জানুয়ারির মধ্যে।’
অক্সিজেন ট্যাংকের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন যে এই অক্সিজেন ট্যাংক না বসলে আইসিইউ গুলা ঠিকমত কাজ করবে না, এ জন্য এগুলো তৈরি করা খুব জরুরি। বর্তমানে খুমেকের দুটি মেশিনের একটিতে একটু সমস্যা থাকায় সর্বোচ্চ নমুনা টেস্টিং ক্ষমতা ১৮৮। আরেকটি মেশিন ঠিক হয়ে গেলে ৩৭৬টি পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা যাবে বলে তিনি জানান।