করোনার মধ্যেই দুঃসংবাদ, বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে পঙ্গপালের ঝাঁক
করোনাভাইরাস বিস্তারের আগেই আফ্রিকা এবং এশিয়ার বেশকিছু দেশে পঙ্গপালের হানার খবর এসেছিল সংবাদ মাধ্যমগুলোতে; কিন্তু মাঝে করোনা বিস্তারের কারণে পঙ্গপালের খবর বেমালুম ভুলে গিয়েছিল মানুষ। এবার পঙ্গপাল নিয়ে ভাবতে হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশের মানুষকে। কারণ, ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকা দেশটির সরকারী কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পঙ্গপালের যে সংবাদ পরিবেশন করেছে, তা বাংলাদেশের জন্য এক ভয়াবহ বিপদের ইঙ্গিত বহন করছে।
দ্য হিন্দুর রিপোর্টে বলা হয়েছে, পঙ্গপালের ঝাঁক ভারত হয়ে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। করোনায় এমনিতেই অর্থনীতি পুরোপুরি বিপর্যস্ত। এর মধ্যে যদি পঙ্গপাল হানা দেয়, তাহলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা বলাই বাহুল্য। আরেক ভয়াবহ বিপদের অশনিসঙ্কেত দেখা যাচ্ছে পঙ্গপালের হানার খবরে।
শনিবার ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে এ শঙ্কার কথা জানানো হয়। বলা হচ্ছে, এরই মধ্যে পঙ্গপালের একটি ঝাঁক ভারতে প্রবেশ করেছে। আরেকটি ঝাঁক দক্ষিণ এশিয়ার কৃষিজমিতে ছড়িয়ে পড়ার লক্ষ্যে পাড়ি দিচ্ছে ভারত মহাসাগর।
বেশ কিছুদিন ধরেই সংবাদপত্রে পঙ্গপালের উপস্থিতির খবর ছিল। বিশেষ করে আফ্রিকায়। মহাদেশটির বেশকিছু দেশ ইতিমধ্যে পঙ্গপালের আক্রমণে বিপর্যস্ত। করোনার পূর্ববর্তী সময়ে পঙ্গপালের জন্য পাকিস্তানেও জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল।
এবার দ্য হিন্দু যে সংবাদ প্রকাশ করেছে, তা বাংলাদেশের জন্যও এক বড় দুঃসংবাদ বয়ে আনছে। কারণ ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার কৃষিজমিতে যদি পঙ্গপাল হানা দেয়, তাহলে কৃষিজ ফসল একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে।
পঙ্গপাল যে ভারতে হানা দেবে, সে ব্যাপারে আগেই বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) সতর্ক করেছিল ভারতকে। তারা পঙ্গপালের সম্ভাব্য আক্রমণের সময় হিসেবে মে মাসকেই ধরে নিয়েছিল। তবে এফএও’র ওই রিপোর্টে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ না থাকলেও দ্য হিন্দু আজ যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেখানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম।
দ্য হিন্দুর রিপোর্টে বলা হয়েছে, পঙ্গপালের একটি দল ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে সরাসরি দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষ করে ভারতের উপকূলীয় এলাকায় কৃষিজমিতে আছড়ে পড়তে পারে। এরপরই পঙ্গপালের সেই দলের গন্তব্য হতে পারে বাংলাদেশ।
করোনা মোকাবিলায় এমনিতেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পুরোপুরি বিপর্যস্ত। এরই মধ্যে পঙ্গপালের আক্রমণ। দ্য হিন্দুকে ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার এই সময়ে পঙ্গপালের আক্রমণ ঠেকাতে ‘দুই ফ্রন্টে’ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে ভারত সরকারকে। একটি হচ্ছে করোনাভাইরাস মহামারি এবং অন্যটি পঙ্গপাল। পঙ্গপালের কারণে খাদ্যনিরাপত্তা ভয়াবহ হুমকির মুখে। এ কারণে ভয়াবহ এই দুটি দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত।
ভারত সরকারের ওই সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু পত্রিকায় লেখা হয়েছে, ‘হর্ন অব আফ্রিকা থেকে একঝাঁক পঙ্গপাল মরু অঞ্চলের আরেক দল পঙ্গপালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এসব ঝাঁক মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেন, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, ইরান, সৌদি আরব এবং পাকিস্তান হয়ে ভারতেও হানা দিচ্ছে। ইতিমধ্যে ভারতের পাঞ্জাব ও হারিয়ানা রাজ্যে ঢুকে পড়েছে একদল পঙ্গপাল। এদিকে পঙ্গপালের আরও একটি দল ভারত মহাসাগর পাড়ি দিচ্ছে। ভারতীয় উপদ্বীপের কৃষিজমিতে হানা দেয়ার পর এ দলটি বাংলাদেশের দিকে যেতে পারে। পঙ্গপালের এ দুই দল মিলে এ অঞ্চলে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এতে মারাত্মকভাবে খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।’
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও বা ফাও) তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, পঙ্গপালের একটি দল ১ বর্গকিলোমিটারেরও কম এলাকা থেকে শুরু করে ১০০’র বেশি বর্গকিলোমিটারের ফসল একসঙ্গে নষ্ট করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এক বর্গকিলোমিটারের ঝাঁকে থাকতে পারে ৪ কোটিরও বেশি পঙ্গপাল। যারা একদিনে ৩৫ হাজার মানুষের খাবার সাবাড় করে দিতে পারে।
ফাও জানিয়েছে, আফ্রিকায় ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে পঙ্গপালের দল। পঙ্গপালের উৎপাতে ইতিমধ্যে মহাদেশটিতে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এবার এশিয়া মহাদেশে যদি পঙ্গপালের বিস্তার ঘটে, তাহলে তা খাদ্য মহামারিতে রূপ নিতে পারে। জাতিসংঘের নিরাপাত্তা কাউন্সিলকে এক ব্রিফিংয়ে ফাওয়ের খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বেসলি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, বর্তমান মহামারিটি এখন ‘ক্ষুধার্ত মহামারি’তে পরিণত হতে পারে।
গত ২১ এপ্রিল একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। যেখানে দেখা যাচ্ছে, মরুভূমির পঙ্গপাল পূর্ব আফ্রিকা, ইয়েমেন এবং দক্ষিণ ইরানে এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে বিশ্বে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় পঙ্গপালের উৎপাতের ঘটনা ঘটতে পারে এ বছর। পঙ্গপালের উৎপাত মোকাবিলায় এফএও সাত কোটি ডলারের জরুরি তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।