করোনার প্রভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পদ্মাসেতু ও রেল সংযোগের কাজ
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে পদ্মাসেতু ও সেতুর রেল সংযোগের কাজ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের (সিআরইসি) পদ্মাসেতু রেললাইন প্রকল্প পরিচালক ওয়ান কুন।
তিনি বলেছেন, প্রকল্পের কাজ চালিয়ে নিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেও কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৪ মার্চ) কেরাণীগঞ্জের জাজিরা এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখন চীনে সম্পূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ রেখেছে। পাশাপাশি কিছু কর্মকর্তার অ্যাপিডেমিক সেন্টার ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। কাজের সুবিধার্থে রেল প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি এখন ভিন্নভিন্ন দেশ থেকে আমদানি এবং সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে করোনা ভাইরাসের প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে সিআরইসি।
হুবেই প্রদেশ ছাড়া এ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত চীনের অন্যান্য প্রদেশের কর্মকর্তারা এরই মধ্যে বাংলাদেশে ফিরেছেন। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছুটিতে থাকা কর্মকর্তাদের ছুটি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। সিআরইসির বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ছুটি না নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
করোনা ভাইরানের প্রভাবে কাজ ব্যহত হওয়ায় প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেও কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত দক্ষ চীনা শ্রমিক না থাকায় স্থানীয় আরও দক্ষ শ্রমিকদের এ প্রকল্পে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
ওয়ান কুন বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় এবং পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ও পদ্মাসেতু প্রকল্পের চলমান কাজের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর সিআরইসি প্রথমত পদ্মাসেতু প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতে করোনা ভাইরাস না হয় তা নিশ্চিত করেছে।দ্বিতীয়ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্পের যেসব চীনা কর্মকর্তা ছুটি কাটাতে হুবেই প্রদেশে গিয়েছেন তাদের ছুটি এখন বলবৎ আছে। হুবেই প্রদেশে বাংলাদেশ থেকে আগত এসব কর্মকর্তাদের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আর যারা আসার অনুমিত পাচ্ছে তাদের বাংলাদেশে আসার পরে দুই সপ্তাহ কোয়ারান্টাইন পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক শামসুজ্জামান, চীনা দূতাবাসের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাউন্সিলর লিউ ঝেনহুয়া, বাংলাদেশ রেলওয়ের পিবিআরএলপির প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন, সিআরইসির পদ্মাসেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প (পিবিআরএলপি) পরিচালক লিউ জিয়ানহুয়া প্রমুখ।
পিবিআরএলপির ভূতাত্ত্বিক জরিপ ও অ্যালাইনমেন্টের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ বাঁধ ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। ৯২ দশমিক ৮৫ শতাংশ টেস্ট-পাইল ডিজাইন শেষ হয়েছে। ওয়ার্কিং পাইল ডিজাইন শেষ হয়েছে ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ, কালভার্টের ডিজাইন শেষ হয়েছে ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ, বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ, টেস্ট-পাইলের কাজ শেষ হয়েছে ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ, ওয়ার্কিং পাইলের কাজ শেষ হয়েছে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
পদ্মাসেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ৩৯টির কাজ শেষ হয়েছে। মোট ৪১ টি স্প্যানের মধ্যে ২৫ টি বসানো হয়েছে। কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ।