করোনাভাইরাস সঙ্কটে মন ছুঁয়ে যাওয়া তিন কাহিনী
বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেওয়া মহামারী করোনাভাইরাসের এ সঙ্কটে চলমান লকডাউনের মধ্যে এবার দেখা গেল ঘরবন্দি মানুষের মুখে একটু হাসি ফোটানো আর সহায়তার হাত বাড়ানোর অনন্য নজির।
স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে মন ছুঁয়ে যাওয়া তিন ঘটনা। যা দেখে মুগ্ধ নেট দুনিয়া। ঘটনাগুলো ভারতের হরিয়ানা, দিল্লি এবং মহারাষ্ট্রের।
জন্মদিনের সকাল বদলে দিয়েছে পুলিশকর্মী:নিঃসঙ্গতায় কাটছিল দিন। তার ওপর আবার লকডাউন। ফলে পরিবার-বন্ধুবান্ধব তো বটেই, পাড়া প্রতিবেশী থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন হরিয়ানার পাঁচকুলার বাসিন্দা করণ পুরী। বয়স ৬০ এর ওপর। জন্মদিন মনে থাকলেও পালন করবে কে? কিন্তু এদিনের সকালটাই যে বদলে যাবে ভাবতেই পারেননি তিনি। পাঁচকুলার চার পুলিশকর্মী আচমকাই এসে ‘শুভ জন্মদিন’ জানিয়ে চমকে দেন তাকে।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া সে ঘটনা দেখে মুগ্ধ নেট দুনিয়া। ভিডিওতে দেখা গেছে, করণ বাড়ির ভিতর থেকে গেটের দিকে এগিয়ে এসে বলছেন, “আমার নাম করণ পুরী। সিনিয়র সিটিজেন। এখানে একাই থাকি।” তার কথা শেষ হতেই পুলিশ কর্মীরা গেয়ে ওঠেন ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ’ গান, হাতে তাদের কেক। বিস্ময়ে তখন হতভম্ব পুরী। পুলিশ কিভাবে জানল তার জন্মদিনের কথা? আচমকা এমন সারপ্রাইজে চোখে পানি চলে আসে পুরীর। দূরে থাকা সন্তানদের কথা মনে পড়ায় আবেগপ্রবণ হয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।
পুলিশকর্মীরা তখন বলে ওঠেন, “আপনি একা নন, আমরা তো আপনারই পরিবার। তাই এসেছি।” করণ পুরীকে জন্মদিনের টুপিও পরানো হয়, কাটানো হয় কেক। পুলিশকর্মীরা এভাবে নিঃসঙ্গ কোনো বৃদ্ধকে এমন আনন্দ দিতে পারে ভাবাই যায় না। তাই পুলিশের এমন আন্তরিক আচরণ মন জয় করেছে সবার।
রান্না করে খাওয়াচ্ছেন বাড়িওয়ালা:করোনাভাইরাস মহামারীর এ সময়ে অন্যসব জায়গার মতো ভারতেও সামনের সারিতে থেকে লড়ছেন চিকিৎসকরা। দিনরাত তাদেরকে করে যেতে হচ্ছে অক্লান্ত পরিশ্রম।
কর্মক্ষেত্রে প্রচণ্ড উদ্বেগ আর মানসিক চাপ নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে তাদেরকে।
রাজধানী দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে এমনই পরিশ্রম আর চাপ নিয়ে কাজ করে চলেছেন এক চিকিৎসক। নাম কৌশিক বড়ুুয়া।
তার মুখ থেকেই শোনা গেল মানবতা আর সহায়তা লাভের আরেক কাহিনী। তার কথায়, ‘সত্যিকারের এক দয়ালু আত্মার’ সান্নিধ্য পেয়েছেন তিনি।
আর এই দয়ালু মানুষটি হচ্ছেন, তার বাড়িওয়ালা রোহিত সুরী। যিনি প্রতিদিন কৌশিকের জন্য রান্না করে খাবার পাঠান। যার কারণে সারাদিন কাজ করে গলদঘর্ম হয়ে বাড়ি ফিরে কৌশিক টেবিলে পেয়ে যান থালায় বেড়ে রাখা গরম গরম খাবার।
কৌশিক এবং রোহিত দু’জনই একা থাকেন। ভাল বন্ধু হয়ে উঠেছেন দুইজনই। সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে রোহিতের সঙ্গে তোলা একটি সেলফিও ব্লগে দিয়েছেন কৌশিক বড়ুুয়া।
তিনি জানান, তারই এক চিকিৎসক বন্ধুকে যেখানে তার বাড়িওয়ালা বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেছেন করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে সেখানে “রোহিত সুরীর মতো বাড়িওয়ালার তুলনা হয় না। করোনাভাইরাস সঙ্কটের এ সময়ে এমন মানুষই বিশ্বের দরকার।”
পুলিশের আন্তরিকতায় আরেক জন্মদিন:শিশুদের জন্য জন্মদিন মানেই আনন্দময় একটি দিন। কেক কাটা, উপহার পাওয়া, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা- প্রতিবছর জন্মদিন এভাবেই কেটেছে মহারাষ্ট্রের বৎসাল শর্মার।
কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এবছর সেরকম হয়নি। উপরন্তু শর্মার এবারের ১৫তম জন্মদিনটাতে কাছে ছিল না বাবাও। কারণ,কাজের জন্য তিনি গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। লকডাউনের কারণে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সময়মত বাড়ি ফিরতে পারেননি।
কিন্তু একী! জন্মদিনে ঠিকই চলে এল সেই দূর দেশ থেকে বাবার দেওয়া কেক! বিস্ময় আর আনন্দে আত্মহারা শর্মা। কাজটি আর কেউ নয়, করেছে পুলিশ।
শর্মার বাবা স্থানীয় পুলিশকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন তার পক্ষ থেকে ছেলেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর। আর সে অনুরোধেই শর্মার বাড়ির দরজায় কেক নিয়ে হাজির হয় পুলিশ।
পুলিশের গাড়ির বনেটের ওপরই রাখা কেক কেটে পালন হল জন্মদিন। সঙ্গে সবার হাততালি আর গানের সুরে তৈরি হল আনন্দময় পরিবেশের এক আবহ ।
“এবছর পুলিশ আমার জন্মদিনকে বিশেষভাবে স্মরণীয় করে রাখল, চমৎকার, আমার খুবই ভাল লেগেছে ”, টুইটারের ভিডিওতে আনন্দ ঝরে পড়ে শর্মার কণ্ঠে।