করোনাভাইরাস সঙ্কটে অনিশ্চয়তায় ডি ভিলিয়ার্সের ফেরা
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে থমকে আছে ক্রিকেট। থেমে আছে এবি ডি ভিলিয়ার্সের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা নিয়ে আলোচনাও। ফেরার সেই সম্ভাবনা একেবারেই শেষ হয়ে যেতে পারে, যদি করোনাভাইরাসের কারণে পিছিয়ে যায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় একের পর এক সিরিজ স্থগিত হচ্ছে বা পিছিয়ে যাচ্ছে। আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই আসরও পিছিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
দক্ষিণ আফ্রিকার একটি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডি ভিলিয়ার্স বলেছেন, বিশ্বকাপ পিছিয়ে গেলে তার ফেরার সম্ভাবনায়ও ভাটা পড়বে প্রবলভাবে।
“ টুর্নামেন্ট যদি পরের বছরে চলে যায়, অনেক বাস্তবতাই বদলে যাবে। এই মুহূর্তে আমি মনে করি যে, ফিরতে প্রস্তুত। কিন্তু আমি জানি না, তখন (বিশ্বকাপ পিছিয়ে গেলে) আমার শরীর কেমন বোধ করবে, আমি কতটা ফিট থাকব।”
“ যতটা ফিট আমি থাকতে চাই, যদি শতভাগ তা থাকতে পারি, তাহলে অবশ্যই খেলতে প্রস্তুত থাকব। কিন্তু সেটা যদি না পারি, তাহলে মোটেও নিজেকে এগিয়ে নেব না। কারণ আমি ওই ধরণের মানুষ নই যে শতকরা ৮০ ভাগ দিয়ে কোনো কাজ করে ফেলব।”
২০১৮ সালের মে মাসে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান ডি ভিলিয়ার্স। তবে গত ডিসেম্বরে মার্ক বাউচার কোচ হওয়ার পরেএই তারকার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন ফেরা নিয়ে। গত জানুয়ারিতে বিগ ব্যাশ চলার সময় ডি ভিলিয়ার্স সংবাদমাধ্যমে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ফিরতে পারলে তার দারুণ লাগবে।
মূলত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘিরেই ছিল তার ফেরার আলোচনা। ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে অবশ্য তাকে দেখা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছিল, এপ্রিল-মে মাসে আইপিএল খেলার পর ডি ভিলিয়ার্সকে ডাকা হবে দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি দলে। আগামী জুনে শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার কথা প্রোটিয়াদের, জুলাই-অগাস্টে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
তবে আইপিএল ও এই সব সিরিজই এখন অনিশ্চতায় পড়ে গেছে। তাই অনিশ্চিত ডি ভিলিয়ার্সের ফেরাও।
তবে টুর্নামেন্ট পিছিয়ে যাওয়া ছাড়াও ডি ভিলিয়ার্সের ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে আরেকটি কারণেও। হুট করে যেভাবে অবসর নিয়েছিলেন, ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে সেভাবে আচমকাই আবার বলেছিলেন, বিশ্বকাপ খেলতে চান। নিজ দেশে তখন প্রবল সমালোচনা হয়েছিল তার। সেই সময়ের প্রধান কোচ ওটিস গিবসন ও অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি ফিরিয়ে দেন সেই প্রস্তাব, সংবাদমাধ্যম ও ক্রিকেট মহলেও বলাবলি হচ্ছিল, নিজের ইচ্ছেমত খেলার সিদ্ধান্ত নিতে চান ডি ভিলিয়ার্স।
সেই সময়টায় যে কষ্ট পেয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স, তা এখনও পোড়ায় তাকে। তাই নিজেকে প্রমাণ করতে পারলে, তবেই ফিরতে চান দলে।
“ নিশ্চিত কোনো জবাব দিতে পারছি না, কারণ অতীতে আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম ও যন্ত্রণায় পুড়েছিলাম। আমি কখনোই ওই ধরণের মানুষ নই যে, যা ইচ্ছা পেতে চাইব। আপনাআপনি দলে ঢুকতে চাই না। অন্য সব ক্রিকেটারের মতো, আমাকেও যোগ্যতা দিয়ে দলে জায়গা পেতে হবে। গতবছর খুব খারাপ লেগেছিল, যখন লোকে বলেছিল আমি জায়গা নিশ্চিত ধরে নিয়েছি।”
“ আমাকেও ট্রায়াল দিতে হবে এবং বাউচারকে (প্রধান কোচ) দেখাতে হবে যে আমি এখনও যথেষ্ট ভালো। দেখাতে হবে যে, তারা আমাকে দলে নিতে পারে কারণ, ওই জায়গার লড়াইয়ে থাকা ক্রিকেটারটির চেয়ে আমি ভালো।”
শেষ পর্যন্ত যদি ক্রিকেটার হিসেবে ফেরা না হয়, অন্য কোনো ভূমিকায় ফেরার পথও খোলা রাখছেন ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে দারুণ জনপ্রিয় এই ব্যাটসম্যান।
“ আমি সবশেষ ক্রিকেট খেলেছি জানুয়ারিতে এবং আগামী তিন মাস হয়তো আর খেলার সুযোগ নাও হতে পারে। আমার ভাবনা তাই বদলাতেই পারে। এমনও হতে পারে যে বাউচারকে বললাম, ‘আমি আগ্রহী, দলে ভূমিকা রাখতে চাই, তবে নিজে খেলতে চাই না।”