করোনাভাইরাস: যুক্তরাষ্ট্রের দুই কংগ্রেস সদস্য আক্রান্ত
মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের দুই সদস্যও আক্রান্ত হয়েছেন।
বুধবার ফ্লোরিডার কংগ্রেসম্যান মারিও দিয়াজ-বালার্ত ও উটাহ’র বেন ম্যাকঅ্যাডামস তাদের দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন।
এটাই যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আইনপ্রণেতার শরীরে কভিড-১৯ এর প্রথম উপস্থিতির খবর বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বুধবার এক বিবৃতিতে রিপাবলিকান পার্টির দিয়াজ-বালার্ত বলেন, গত শুক্রবার প্রতিনিধি পরিষদে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় পদক্ষেপ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে ভোট দেয়ার পর থেকেই তিনি স্বেচ্ছায় ‘আইসোলেশনে’ ছিলেন।
৫৮ বছর বয়সী এ কংগ্রেসম্যান জানান, শনিবার শরীরে জ্বর ও মাথা ব্যথা টের পান তিনি।
তার স্ত্রী আগে থেকেই বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছেন; তার (স্ত্রী) ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে এ শঙ্কায় সাউথ ফ্লোরিডায় নিজের বাড়িতে যাওয়ার চিন্তাও বাদ দেন দিয়াজ-বালার্ত।
“কিছুক্ষণ আগে আমি আমার দেহে করোনাভাইরাস ধরা পড়ার বিষয়টি জানতে পারি,” বুধবারের বিবৃতিতে বলেন ফ্লোরিডার এ কংগ্রেস সদস্য।
একইদিন উটাহ’র ওয়েস্ট জর্ডান থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ম্যাকঅ্যাডামস জানান, ওয়াশিংটন থেকে ফেরার পর শনিবার সন্ধ্যা থেকেই তার হালকা ঠাণ্ডাজাতীয় উপসর্গ দেখা দেয়। এর পরপরই তিনি বাড়িতে স্বেচ্ছা ‘আইসোলেশনে’ চলে যান।
পরিস্থিতি খারাপ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে একটি ক্লিনিকে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করান। বুধবার ওই পরীক্ষার ফল থেকেই নিজের কভিড-১৯ হয়েছে বলে জানতে পারেন ৪৫ বছর বয়সী এ ডেমোক্রেট।
একই সেশনে অংশ নেয়ার পর দুই কংগ্রেস সদস্যের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এ ঘটনা কয়েকদিন পর ফের শুরু হতে যাওয়া প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশনে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলেও স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির কার্যালয় তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
দেশটিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বেশ কয়েকজন সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যের স্বেচ্ছা ‘আইসোলেশনের’ খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে দিয়াজ-বালার্ত এবং ম্যাকঅ্যাডামসই প্রথম তাদের দেহে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির উপস্থিতি জানালেন।
দুই কংগ্রেসম্যান তাদের দেয়া আলাদা বিবৃতিতে মার্কিন নাগরিকদের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) দেওয়া নির্দেশাবলী কঠোরভাবে মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সব অঙ্গরাজ্যে পৌঁছে গেছে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটিতে ১৪ হাজারের বেশি লোকের দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে, মৃতের সংখ্যা দুইশ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দাদের ‘ঘরে থাকার’ নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর গ্যাভিন নিউসম।
অঙ্গরাজ্যটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার কভিড-১৯ রোগীর সন্ধান মিলেছে এবং অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যেই করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি লোক মারা গেছে বলে দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
ভাইরাস শনাক্তে কিট এবং চিকিৎসা উপকরণের ঘাটতি নিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ও অঙ্গরাজ্যগুলোর ব্যাপক সমালোচনাও চলছে।
সংকট উত্তরণে এরই মধ্যে মার্কিন সিনেট এক ট্রিলিয়ন ডলারের একটি ‘আর্থিক প্যাকেজের’ অনুমোদন দিয়েছে। এতে করোনাভাইরাস মোকাবেলা, চিকিৎসা এবং ভাইরাসের কারণে দেখা দেওয়া আর্থিক ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
এসব পদক্ষেপের মধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নবিত্তদের নগদ অর্থ দেওয়ার পরিকল্পনাও আছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।