করোনাভাইরাস মানুষের তৈরি নয়: গবেষণা
বিশ্বজুড়ে আতংক ছড়িয়ে দেওয়া প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস কোনো ‘গবেষণাগারে তৈরি হয়নি’, প্রাকৃতিক বিবর্তনের মাধ্যমে ভাইরাসটির উদ্ভব হয়েছে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন রোগটির উৎপত্তির বিষয়ে সব ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে নাকচ করে দিয়েছে বলে মত টেলিগ্রাফের।
ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহান শহরে ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয়েছিল। এরপর থেকে এটি দ্রুতগতিতে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এখন বিশ্বের প্রায় ১৭০টি দেশের দুই লাখেরও বেশি লোক ভাইরাসটিতে আক্রান্ত এবং প্রায় নয় হাজার লোক এর সংক্রমণে সৃষ্ট রোগে মারা গেছে।
কিন্তু বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি শঙ্কা ও ভুল তথ্যও বিশ্বজুড়ে ডালপালা মেলেছে। মহামারির পাশাপাশি বিশ্বকে ‘তথ্যের মহামারির’ বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ।
সার্স-কভ-টু নামের নতুন করোনাভাইরাসটি আসলে গবেষণাগারে তৈরি হয়েছে, সাধারণভাবে এমন একটি মিথ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়েছে। কিন্তু নতুন গবেষণায়, যার ফলাফল নেচার মেডিসিন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে, গবেষকরা করোনাভারাসটির জেনোম সিক্যুয়েন্স বিশ্লেষণ করেছেন আর এটি যে মানুষ তৈরি করেনি, প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভব হয়েছে সে বিষয়ে জোরালো প্রমাণ পেয়েছেন।
সম্ভবত ভাইরাসটি একটি বাদুর বা একটি বনরুই জাতীয় পিঁপড়াভুক প্রাণী থেকে ছড়িয়েছে বলে ধারণা পেয়েছেন তারা।
গবেষণা প্রতিবেদনটির সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “আমাদের বিশ্লেষণ পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে, সার্স-কভ-টু গবেষণাগারে তৈরি করা হয়নি বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তন করা ভাইরাস নয়।”
গবেষক দল ভাইরাসটির ‘স্পর্শ তন্তুর’ দুটি প্রোটিন উপাদান বিশ্লেষণ করেছেন। ভাইরাসটি মানুষ অথবা প্রাণি কোষের সঙ্গে সংযুক্ত হতে ও তার দখল নিতে এই স্পর্শ তন্তুগুলোই ব্যবহার করে।
তারা দেখেছেন, ওই প্রোটিনের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য মানুষের কোষের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটাতে এতোটাই সক্ষম যে এটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফল ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে এটি তৈরি হয়নি।
ভাইরাসটির ‘ব্যাকবোন’ বা সামগ্রিক মলিক্যুলার স্ট্রাকচার বিশ্লেষণেও এই ফলাফল প্রয়োগ করেন গবেষকরা।
কেউ যদি নতুন একটি করোনাভাইরাসের রোগজনক ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে চায় তবে তাকে মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টির জন্য পরিচিত একটি প্রাকৃতিক ভাইরাসের ব্যাকবোন থেকেই তা করতে হবে বলে লিখেছেন এই গবেষকরা। কিন্তু মানুষকে সংক্রমিত করার জন্য পরিচিত অন্য যে ছয়টি করোনাভাইরাস আছে তাদের সঙ্গে নভেল করোনাভাইরাস বা সার্স-কভ-টু এর ব্যাকবোনের ‘যথেষ্ট পার্থক্য’ আছে।
“জানা করোনাভাইরাস প্রজাতিগুলোর প্রাপ্ত জেনোম সিক্যুয়েন্সের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করে, আমরা দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত যে সার্স-কভ-টু (নভেল করোনাভাইরাস) এর উদ্ভব প্রাকৃতিকভাবে হয়েছে,” বলেন গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ক্রিপস রিসার্চের ইমিউনোলজি ও মাইক্রোবায়োলজির সহযোগী অধ্যাপক ড. ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসেন।