করোনাভাইরাস: বিশ্বে শনাক্ত রোগী ছাড়াল ২ কোটি
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর সাত মাসের মাথায় বিশ্বে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছিল, তার সঙ্গে আরও এক কোটি যুক্ত হল দেড় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাত্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকালে বিশ্বে মোট শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ২ কোটি ১৪ হাজার ৫৭৪ জনে।
আর চীনের উহান থেকে পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৫৫ জনে পৌঁছেছে।
বিভিন্ন দেশের প্রকাশ করা সরকারি তথ্যের বরাতে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বে এ পর্যন্ত যত রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার অর্ধেক হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল আর ভারতে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতিবছর বিশ্বে যত লোক মারাত্মক ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়, আট মাসে মোটামুটি তার চারগুণ মানুষকে সংক্রমিত করেছে নতুন করোনাভাইরাস।
আর করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তা এক বছরে ইনফ্লুয়েঞ্জায় মৃত্যুর সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মানবদেহে ধরা পড়ে; খুব দ্রুত বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা।
পরে এ ভাইরাসের নাম দেওয়া হয় নভেল বা নতুন করোনাভাইরাস। আর এ ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগের নাম দেওয়া হয় কোভিড-১৯।
চীনে প্রথম মৃত্যুর দুদিন পর ১৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডে প্রথম রোগী ধরা পড়ার পর জানা যায়, চীনের রাষ্ট্রীয় সীমানা পেরিয়ে গেছে এই ভাইরাস।
তারপর হু হু করে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা, দেড় মাসের মধ্যে এন্টার্কটিকা বাদে সব মহাদেশেই ধরা পড়ে রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তখন এই পরিস্থিতিকে মহামারী আখ্যায়িত করে।
কঠোর লকডাইনে চীন তিন মাসের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও ততদিনে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র এবং পরে রাশিয়ায় ব্যাপক মাত্রা পায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব।
প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর চার মাসের মাথায় ১ এপ্রিল বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়ায়। এর পরের সাত সপ্তাহে আরও ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় ২১ মে আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধ কোটি ছাড়িয়ে যায়।
এরপর পাঁচ সপ্তাহের মাথায় ২৮ জুন সেই সংখ্যা কোটিতে পৌঁছায়। তারপর আরও এক কোটি রোগী শনাক্তে সময় লেগেছে ৪৩ দিন।
অনেক দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ঘাটতি থাকায় এবং কোনো কোনো দেশ হাসপাতালের বাইরে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হিসাবের মধ্যে না আনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
মহামারীতে পর্যুদস্ত অনেক দেশ লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে জুনের শুরুতে অর্থনীতি সচল করার চেষ্টা শুরু করলেও অনেক জায়গায় আবার নতুন করে বিধিনিষেধ ফিরিয়ে আনতে হয়েছে।
জীবন ও জীবিকার প্রশ্নে ভারসাম্য আনতে গিয়ে কর্মক্ষেত্র আর সামাজিক জীবন যাপনে আনতে হয়েছে নানা ধরনের পরিবর্তন, যা চালিয়ে যেতে হতে পারে করোনাভাইরাসের টিকা না পাওয়া পর্যন্ত।
রয়টার্স লিখেছে, সর্বশেষ যে তথ্য-উপাত্ত আসছে, তাতে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এখনও বাড়ছে।
একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা রোববারই ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
এছাড়া ব্রাজিলে ৩০ লাখ ৫৭ হাজার, ভারতে ২২ লাখ ৬৮ হাজার মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে।
রাশিয়ায় ৮ লাখ ৯০ হাজার, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এ ভাইরাস সবচেয়ে দ্রুত গতিতে ছড়িয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে। বিশ্বে এ পর্যন্ত যত কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার ২৮ শতাংশই এসব দেশের। আর বিশ্বের মোট মৃত্যুর ৩০ শতাংশও ঘটেছে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে।
মৃত্যুর সংখ্যাতেও বিশ্বে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র, সেখানে এক লাখ ৬৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর পরেই রয়েছে ব্রজিল, সেখানে সরকারের নথিতে এসেছে ১ লাখ ১ হাজার মানুষের মৃত্যুর তথ্য।
এছাড়া মেক্সিকোতে ৫৩ হাজার, যুক্তরাজ্যে ৪৬ হাজার এবং ভারতে ৪৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে করোনাভাইরাস।