করোনাভাইরাস: প্রত্যাশিত লোক হলনা ট্রাম্পের সমাবেশে
প্রাণঘাতী নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউন দেয়ার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম নির্বাচনী সমাবেশে জমায়েত ধারণার চেয়েও অনেক কম হয়েছে।
ওকলাহোমা রাজ্যের টালসা নগরীতে এ নির্বাচনী সমাবেশে অংশ নিতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প, কিন্তু শনিবার ব্যাংক অব ওকলাহোমা সেন্টারের ভেতরে ১৯ হাজার আসনের সবটাও পূর্ণ হয়নি বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে।
ট্রাম্প ভেবেছিলেন অনুষ্ঠানস্থলের বাইরেও বিশাল জমায়েত থাকবে। তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলারও পরিকল্পনা ছিল তার। লোক কম হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাকে ওই পরিকল্পনা বাদ দিতে হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মহামারীর মধ্যে এ ধরনের সমাবেশ নিয়ে এমনিতেই ওই অঞ্চলে ব্যাপক উদ্বেগ বিরাজ করছিল। সমাবেশ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে আয়োজন সংশ্লিষ্ট ট্রাম্পের ৬ কর্মীর দেহে নতুন করোনাভাইরাসের শনাক্ত হয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন।
সমাবেশে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামা ট্রাম্প। সমাবেশে উপস্থিত সমর্থকদের ‘যোদ্ধা’ বলে অভিহিত করেন তিনি। সমাবেশে লোক কম হওয়ার জন্য গণমাধ্যম ও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকারীদের ঘাড়ে দায় চাপান।
ট্রাম্পের এ নির্বাচনী সমাবেশকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর চার দেয়ালের ভেতর অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় জমায়েতগুলোর একটি বলা হচ্ছে। তবে এমন এক সময়ে এ সমাবেশ হল, যখন ওকলাহোমায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নতুন করোনাভাইরাসে শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যায় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ২২ লাখ ৫৫ হাজারেরও বেশি কোভিড-১৯ রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে; মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে এক লাখ ১৯ হাজার।
সমাবেশে ট্রাম্প জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে পরীক্ষা বেশি হওয়ায় বেশি আক্রান্তের সন্ধান মিলছে, এ কারণে তিনি তার প্রশাসনের কর্মীদের শনাক্তকরণ পরীক্ষা কমাতে বলেছেন।
ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষাকে ‘দুই ধারী তলোয়ার’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।
“খারাপ ব্যাপারটা হচ্ছে- যখন আপনি ব্যাপক হারে পরীক্ষা করবেন, আপনাকে অনেকের পরীক্ষা করতে হবে, এবং আক্রান্তও অনেক পাবেন। সে কারণেই আমি বলেছি, পরীক্ষার হার কমাও। এরপরও তারা পরীক্ষা করেই যাচ্ছে, করেই যাচ্ছে,” বলেছেন তিনি।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা পরে জানান, শনাক্তকরণ পরীক্ষা নিয়ে প্রেসিডেন্ট টালসার সমাবেশে ‘মজা করেছেন’।
কোভিড-১৯ এর যতগুলো নাম আছে, অন্য কোনো রোগের এত নাম নেই বলেও শনিবারের সমাবেশে ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন বলে সিএনএন জানিয়েছে।
“আমি একে কুং ফ্লু বলতে পারি। আমি এর ১৯টা আলাদা আলাদা নাম বলতে পারবো,” বলেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এর আগে নতুন করোনাভাইরাসকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলেও অভিহিত করেছিলেন।
কেন এ নামকরণ, এ প্রশ্নের জবাবে মার্চে তিনি বলেছিলেন, “কারণ ভাইরাসটি চীন থেকে এসেছে। এটা জাতিগত বিদ্বেষ নয়। না, একেবারেই নয়। এটা চীন থেকে এসেছে। তাই বলছি। আমি নির্ভুল থাকতে চাই।”
সমাবেশে ট্রাম্প নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকেও একহাত নিয়েছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ ভাইস প্রেসিডেন্ট ‘কট্টর বামদের হাতে নাচা অসহায় এক পুতুল’।
মিনিয়াপোলিসে পুলিশ হেফাজতে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন ও একের পর এক মূর্তি উপড়ে ফেলার ঘটনাতে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট।
“বিকৃতমস্তিষ্ক বামপন্থি দুস্কৃতিকারীরা আমাদের ইতিহাস তছনছ করে দেয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের স্মৃতিস্তম্ভগুলো ভেঙে ফেলতে চাইছে। আমাদের চমৎকার সব স্মৃতিস্তম্ভ; তারা মূর্তি উপড়ে ফেলছে, যারা তাদের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণের দাবির কাছে মাথা নোয়াচ্ছে না তাদেরকে শাস্তি দিচ্ছে, নির্যাতন করছে। আমরা তাদের দাবির কাছে নত হব না,” সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন তিনি।