করোনাভাইরাস পৌঁছেছে ৩৯ দেশে, মৃত্যু বেড়ে ২৭৬৩
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার আরও পাঁচ দেশে; বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেছে ৮১ হাজারের কাছাকাছি।
প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ইতোমধ্যে মৃত্যু ঘটিয়েছে ২ হাজার ৭৬৩ জনের, যাদের মধ্যে ২ হাজার ৭১৫ জনই মারা গেছেন চীনে।
ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে অন্যান্য দেশেও চীনের মতই মৃত্যুহার দেখতে হবে বলে মার্কিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন।
চীনের পর এশিয়ায় এ ভাইরাসের প্রকোপ সবচেয়ে মারাত্মক হয়ে উঠেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়, সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছছে ১১ শর বেশি। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে সেনা সদস্যদের মধ্যে।
এদিকে ইউরোপে ইতালি হয়ে উঠেছে নভেল করোনাভাইরাস ছড়ানোর কেন্দ্র। সেখানে আক্রান্ত হয়েছে সোয়া তিনশ মানুষ।
ইউরোপের সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও ক্রোশিয়ার পাশাপাশি আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া এবং লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে প্রথমবারের মত নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এদের সবাই আক্রান্ত হয়েছে ইতালি থেকে।
গত কয়েক দিনে এ ভাইরাস যে গতিতে ছড়িয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রেও এ রোগের ব্যাপক বিস্তার অবশ্যম্ভাবী বলেই মনে করছেন দেশটির বিশেষজ্ঞরা।
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ফ্লুর মত উপসর্গ নিয়ে যে রোগ হচ্ছে, তাকে বলা হচ্ছে কভিড-১৯। গত ডিসেম্বরের শেষে মধ্য চীনের উহান থেকে ছড়াতে শুরু করা এ রোগ ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে ৩৯টি দেশে।কোনো সংক্রামক ব্যাধি যখন মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায়, রোগতত্ত্বের ভাষায় তখন তাকে বলে প্যানডেমিক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে তারা এখনই ‘প্যানডেমিক’ তকমা দিচ্ছে না। কিন্তু পরিস্থিতি যাতে সেদিকে না যায়, সেজন্য সব দেশকেই প্রস্তুতির মধ্যে থাকতে হবে।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দেশটির মূল ভূখণ্ডে ৪০৬ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৫০৮ জন।
সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮ হাজার ৬৪ জনে। আর বিশ্বে এ সংখ্যা ৮০ হাজার ৯৭০ জনের দাঁড়িয়েছে বলে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
সোমবার চীনে মোট ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে নতুন এ করোনাভাইরাসে, সবগুলো মৃত্যুই ঘটেছে হুবেই প্রদেশে, যে অঞ্চলকে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রভূমি বলা হচ্ছে। চীনের মূল ভূখণ্ডে নতুন করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭১৫ জনে।
চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার, সব মিলিয়ে চীনের বাইরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৮ জনে।
তাদের মধ্যে ইরানে ১৫ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১২ জন, ইতালিতে ১১ জন, জাপানে ৫ জন, হংকংয়ে ২ জন এবং ফিলিপিন্স, ফ্রান্স ও তাইওয়ানে একজন করে আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে।
ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস মানুষের দেহে এসেছে- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। এ রোগের কোনো প্রতিষেধকও মানুষের জানা নেই। এখন পর্যন্ত এ রোগে মৃত্যুর হার রয়েছে দুই শতাংশের নিচে, যা সার্সের চেয়ে কম।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নতুন করোনাভাইরাসের প্রকোপ চীনের মধ্যেই ছিল বেশি। কিন্তু গত এক সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরানের পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে। এরপর তা ছড়াতে শুরু করেছে আরব ও মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সেখানে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৯০ জনে। দেশটির উপ স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং একজন এমপিও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ইরানের সঙ্গে ব্মিান চলাচল স্থগিত দিয়েছে, বন্ধ করে দিয়েছে সীমান্ত। কয়েকটি দেশ ইরান ভ্রমণের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে ধুঁকতে থাকা ইরানের অর্থনীতি নতুন করে বড় ধাক্কার মুখে পড়েছে।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪৬ জনে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দায়েগু ও চেওংডোকের সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের মধ্যেই এতদিন সংক্রমণের ঘটনা সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন অন্যান্য অঞ্চলেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন।
সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যেও। অন্তত ১৮ জন সেনা সদস্য সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন মার্কিন সৈন্যও রয়েছেন।