করোনাভাইরাস ঠেকাতে সব প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
চীনের উহানে দেখা দেওয়া নতুন ধরনের করোনাভাইরাস কোনোভাবেই যেন বাংলাদেশে ছড়াতে না পারে সেজন্য ‘ব্যাপক প্রস্তুতি’ নিয়েছে সরকার। এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখা রয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন জানিয়েছেন। নিউমোনিয়ার লক্ষণসহ এ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে চীনে এর মধ্যে ১০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে; আক্রান্ত হয়েছে চার হাজারের বেশি মানুষের দেহে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস নিয়ে সচেতনতা ও করণীয় বিষয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভাইরাসটি সংক্রামক, তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে যায়। আমরা কাজ করছি যেন ভাইরাসটি দেশে না আসতে পারে। সব পোর্টে আমরা চিঠি দিয়েছি, সতর্কবার্তা পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এয়ারপোর্টে স্ক্যানার বসানো হয়েছে, হ্যান্ড স্ক্যানার বসানো হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে নির্দিষ্ট ওয়ার্ড প্রস্তুত করতে সিভিল সার্জনদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কোনো রোগী পেলে আমাদের সকল প্রস্তুতি আছে। তবে ভাইরাসটি বাংলাদেশে আসবে না এটাই আশা করি। ভাইরাসটি খুবই সংক্রমক কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়েছি। কোনো রোগী এলে তাকে হাসপাতালে রাখতে পারলে তা আর ছড়াবে না।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ‘আইসোলেশন’ ওয়ার্ড খোলা হয়েছে বলেও তিনি জানান। দুই হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ জানান।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীনেও বাংলাদেশের কোনো শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়নি। এ ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন নেই, ওষুধও তেমন নেই। লক্ষণ দেখা দিলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে।
বাংলাদেশের যেসব শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা করছেন তাদের দেশে ফেরা নিয়ে এক প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যদি তারা আসতে চায় তাদের নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু চীন সরকার বলছে এখন আনা যাবে না, ১৪ দিনের আগে কাউকেই বের হতে দেবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী ৬ ফেব্রæয়ারি এই ১৪ দিন শেষ হবে।
মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে গত বছরের শেষ দিনে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে নতুন এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সপ্তাহখানেক আগে রাজ্যের সব গণপরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। কেউ কেউ শহর ছেড়ে গেলেও অনেকে সেখানে কার্যত অবরুদ্ধ।
নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাসে চীনে এখন পর্যন্ত ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪ হাজার ৫১৫ জন, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীনের নাগরিকরা বাংলাদেশে যেখানে বেশি থাকেন, আমাদের প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। যারা চীন গেছেন তারা আসবেন তাই এয়ারপোর্টের উপরও বেশি ফোকাস করতে হবে।
ডবিøউএইচও বললে ট্রাভেল ব্যান করা হবে। তবে ট্রাভেল করা নিয়ে আমরা সকর্ত করে দিতে চাই। চীনে এই সময় একান্ত প্রয়োজন না হলে না যাওয়াটাই ভালো। তবে এখনও ট্রাভেল ব্যান করা হয়নি।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, এই ভাইরাস যেন দেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো কারণে বাংলাদেশে চলে এলে তা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো চিকিৎসা দরকার হলেও সেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সচিব বলেন, এই ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ট্রিটমেন্ট প্রটোকল বানিয়েছেন। অর্থাৎ কোন পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হবে তা তারা লিপিবদ্ধ করেছেন।
বছরের এমন এক সময়ে চীনে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, যখন চন্দ্রবর্ষের উৎসবে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াত করে। ফলে ভাইরাস ছড়ানোর সুযোগও বেড়ে গেছে অনেক।
ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে হুবেই প্রদেশের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের বাস চলাচল একপ্রকার বন্ধ করে দিয়েছে চীন সরকার। হুবেই থেকে যারা বেইজিং বা সাংহাইতে যাচ্ছেন, তাদের ১৪ দিনের পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।
আটকে পড়াদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। বাংলাদেশের ২৪৫ জনের শিক্ষার্থী ও গবেষকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে বলে সরকার জানিয়েছে।