করোনাভাইরাস: আতঙ্কের কাছে পরাজিত না হওয়ার আহ্বান পোপের
বিশ্ববাসীকে করোনাভাইরাসের ভয় ও আতঙ্কের কাছে হার না মেনে ‘মৃত্যুর এ সময়ে জীবনের বার্তাবাহক’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস।
শনিবার সন্ধ্যায় ভ্যাটিকান সিটির সেইন্ট পিটারস ব্যাসিলিকায় ইস্টার উৎসবের প্রাক্কালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান বলে বিবিসি জানিয়েছে।
অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচার করায় ঘরবন্দি অবস্থার মধ্যেই বিশ্বজুড়ে রোমান ক্যাথলিক চার্চের একশ ৩০ কোটি অনুসারীর অনেকেই সেইন্ট ব্যাসিলিকার ওই আয়োজনে অংশ নিতে পেরেছেন।
বক্তৃতায় ফ্রান্সিস বাইবেলে থাকা সেই নারীর কথা উল্লেখ করেন, যিনি যিশুর শূন্য কবর আবিষ্কার করে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। মৃত যিশু সেদিন ফের জীবিত হয়ে উঠেছিলেন বলে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন।
“সেসময়ও ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ছিল সেখানে, প্রয়োজন ছিল সবকিছু পুনর্নির্মাণের। বেদনাদায়ক সে স্মৃতি, যেখানে আশা ছিল সামান্য। তাদের, এমনকী আমাদের জন্যও সেটি ছিল সবচেয়ে অন্ধকার সময়। ভয় পেও না, আতঙ্কের কাছে সমর্পিত হয়ো না- এটাই হল আশার বার্তা। আজ আমাদের জন্যও এটা বলা হয়েছে,” বলেছেন পোপ।
চীনের উহানে সাড়ে তিন মাসে আগে আবির্ভূত হওয়া প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস এরই মধ্যে লাখো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে; শনাক্ত হওয়া আক্রান্তের সংখ্যাও ১৮ লাখের দিকে ছুটছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বের অনেক দেশই এখন লকডাউন ও অন্যান্য বিধিনিষেধের আশ্রয় নিয়েছে।
সেইন্ট পিটারস ব্যাসিলিকায় ইস্টারের প্রাক্কালে পোপের বক্তৃতার সময় সাধারণত কয়েক হাজার ভক্ত অনুসারীর সমাগম থাকে, তবে এবারের আয়োজন ছিল অনেকটাই জনশূন্য।
বিবিসি বলছে, শনিবার সন্ধ্যায় পোপের বক্তৃতার সময় সামনে হাতেগোনা কয়েকজনকে দেখা গেছে। করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে ঐতিহ্যবাহী এ অনুষ্ঠানের আঙ্গিকও ছোট করে আনা হয়, বাদ দেয়া হয় ধর্মান্তরিতদের দীক্ষাসহ বেশকিছু অনুষঙ্গ।
ভ্যাটিকান সিটির চারপাশের সীমান্তে ইতালির অবস্থান; ইউরোপের মধ্যে এ দেশটিতেই করোনাভাইরাস সবচেয়ে ভয়াবহভাবে আঘাত হেনেছে। শনিবার পর্যন্ত ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়েছে এক লাখ ৫২ হাজার, হয়তো এক-দুই দিনের মধ্যেই মৃত্যু ২০ হাজার ছাড়াবে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে জনসমাগম ছাড়া ইস্টারপূর্ব আয়োজন করে ‘দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়ায়’ পোপের প্রশংসা করেছেন।
পোপের মতো বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গির্জাতেও পাদ্রীরা জমায়েত ছাড়াই ইস্টারপূর্ব অনুষ্ঠান করেছেন।
করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোববার পোপ তার ইস্টারের ভাষণও চারদেয়ালের ভেতর থেকেই দেবেন বলে জানা গেছে। ঐতিহ্য অনুযায়ী পোপরা সাধারণত সেইন্ট পিটারস স্কয়ারে ব্যাপক ভক্ত অনুসারীর উপস্থিতিতেই এ ভাষণ দিতেন।