করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইটাকে ‘দুর্বল করে দিলেন’ ট্রাম্প
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল বন্ধের যে সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য ‘বড় বিপদ’ দেখছেন বিশ্ব নেতারা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৃহত্তম একক দাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার এক ঘোষণায় জাতিসংঘ সংস্থাটির বিরুদ্ধে নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ‘প্রাথমিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার’ অভিযোগ তুলে তহবিল স্থগিতের কথা জানান।
তার এই সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান। এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সব দেশ, বিশেষ করে সক্ষমতার দিক দিয়ে দুর্বল দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
লিজিয়ান বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতি ভয়ানক এবং এটা একটা গুরুতর মুহূর্ত। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া এবং এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বৈশ্বিক সহযোগিতাকে দুর্বল করবে।”
সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে চীনা কর্মকর্তা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাদের বাধ্যবাধকতা ও অঙ্গীকার প্রতিপালন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এই মহামারী মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক তৎপরতায় নেতৃত্বদানে সহায়তার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”‘দোষারোপ কোনো ফল দেবে না’ বলে সতর্ক করে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেছেন, ভাইরাসের বিস্তার রোধে কাজ করার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে, টিকা আবিষ্কার ও পরীক্ষার কিট তৈরি করে তা বিতরণে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে শক্তিশালী করা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, “এমন একটি সময় যখন করোনাভাইরাস মহামারী কমিয়ে আনা ও নিয়ন্ত্রণে তাদের প্রচেষ্টায় সহায়তা করা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন, তখন কোনো যুক্তিই এই সিদ্ধান্তকে ন্যায্যতা দেয় না।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে ‘বিপজ্জনক’ আখ্যায়িত করে বিল গেটস বলেছেন, “অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখনই বিশ্বের ডব্লিউএইচও-কে বেশি দরকার।”
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস বলেছেন, এখন ডব্লিউএইচও-র বা কোনো হিউম্যানিটারিয়ান সংস্থার তহবিল কাটার সময় নয়।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৃহত্তম একক দাতা দেশ। গত বছর সংস্থাটিকে ৪০ কোটি ডলার দিয়েছিল তারা, যা ডব্লিউএইচও-র মোট বাজেটের ১৫ শতাংশের একটু কম।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার তথ্য গোপন করা ও গুরুতর অব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা নির্ধারণ করতে একটি পর্যালোচনা চলছে আর এ সময় তহবিল বন্ধ রাখতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি আমি।
“ডব্লিউএইচও তার প্রাথমিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে আর একে অবশ্যই জবাবদিহিতায় আনতে হবে।”
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ‘চীনঘেঁষা’ আখ্যায়িত করা ট্রাম্প ওই ঘোষণা দেওয়ার সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে চীনের মাত্র চার কোটি ডলারের মতো দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
ট্রাম্প বলেন, “চীনে মেডিকেল বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে বাস্তব অবস্থার নিরপেক্ষ মূল্যায়ন এবং বিষয়টি নিয়ে চীনের স্বচ্ছতার ঘাটতির বিষয়ে কথা বলা- এই দায়িত্ব কি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পালন করেছে? খুব সামান্য কিছু মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে উৎসেই এই প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা যেত।”
তবে এই মহামারী নিয়ে সতর্কতায় গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য ট্রাম্পকেই দায়ী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।