কমিশন নিই না, তাই বদনামের ভাগীদারও হব না : ওবায়দুল
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
দুর্নীতি নিয়ে বিআরটিসির কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার করার পরদিন বিআরটিএতে গিয়েও এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান জানালেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএতে দালালদের দৌরাত্ম্যে বদনাম হওয়ার কথা স্বীকার করে এর পেছনের কর্মকর্তাদের সংশোধন হতে বলেছেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তিনি কারও কাছ থেকে কোনো কমিশন নেন না, তাই বদনামের ভাগীদারও তিনি হতে চান না। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের প্রচারে জঙ্গিবাদ ও মাদকের মতো দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
নতুন সরকার গঠনের পর মন্ত্রীরাও নিজেদের দপ্তরে গিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক করে বক্তব্য দিচ্ছেন। মঙ্গলবার মতিঝিলে বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন করপোরেশন-বিআরটিসিতে গিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাষ্ট্রায়ত্ত এই পরিবহন সংস্থার কার কত ‘ইনকাম’, তা ভালোভাবে জানেন জানিয়ে সতর্ক করেন তিনি।
পরদিন বুধবার বনানীতে বিআরটিএতে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার দুর্নীতি কমিয়ে জনগণকে সেবা দেওয়ার যে অঙ্গীকার করেছে, তা বাস্তবায়ন করতে চান তিনি। সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অঙ্গীকার করেছেন দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের। সেই অঙ্গীকার আমরা পূরণ করতে চাই। কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকবেন। আমি বার্তা দিচ্ছি, দুর্নীতিমুক্ত বিআরটিএ চাই।
আগে গাড়ি না এনেই বিআরটিএ থেকে ফিটনেস সনদ নবায়নের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এখন এখানে পরিবর্তন কিছুটা হয়েছে। আমি পুরো পরিবর্তন চাই। আমি নতুন করে যাত্রা শুরু করেছি। কিছু অনিয়ম কমিয়েছি। আরও কমাতে হবে। এজন্য কর্মকর্তাদের সচেতন হতে হবে।
বিআরটিএর ভেতরের যোগসাজশ আছে বলেই দালালরা দৌরাত্ম্য দেখাতে পারে বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ভেতরে যোগসাজশ না থাকলে বাইরে থেকে কীভাবে দালালরা এসে উপদ্রব করে? দালালদের কারণে বিআরটিএর বদনাম হচ্ছে। মন্ত্রী হিসেবে এর দায় আমি এড়াতে পারি না।
আমি কোনো কমিশন নেই না, পার্সেন্টেজ নেই না। আমি এর অংশীদার হতে চাই না। যাদের জন্য সুনাম নষ্ট হচ্ছে তাদের সংশোধন হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। নইলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।
বিএরটিএতে এসে মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে মনোযোগী হতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। মেঘনা ও গোমতী সেতু টোলপ্লাজায় টোল আদায়ের নামে যেন হয়রানি না করা হয় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের।
তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি, সহজতর উপায়ে টোল আদায় করেন। বলেছিলাম ভাংতি নিয়ে টোল প্লাজায় আসতে। ভাংতি দেওয়ার নাম করে বিলম্ব করে। টোল আদায়ে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য আবারও নির্দেশ দিচ্ছি। রাজধানীতে ‘গরিব গরিব চেহারার’ ফিটনেসবিহীন যানবাহন এখনো কীভাবে চলছে, তা বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানের কাছে জানতে চান মন্ত্রী।
জবাবে তিনি বলেন, প্রতিদিনই এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। এসব গাড়ি না চালাতে মালিকদের অনুরোধ করা হলেও তারা মানে না। কোনো ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় এসব যানবাহনকে জব্দ করা যাচ্ছে না। তখন ডাম্পিং স্টেশন করার জন্য একটি জায়গা চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাতে বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস নিয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, তারা কমিটির সুপারিশগুলো মেট্রো আরটিসিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেখানে এটি প্রক্রিয়াধীন আছে।