কচুর লতি চাষে আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে ডুমুরিয়ার ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকরা
আলি আবরার
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকেরা কচুর লতি চাষ করে আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে। উপজেলাটি মূল শহর থেকে দূরে হওয়ায় তাদের ফসল জেলার অন্যান্য জায়গায় বিক্রির জন্য তারা ব্যাবহার করছেন ইঞ্জিন চালিত যান। একসময় কচুর লতির কোনো বাজার দর না থাকলেও বর্তমানে বাজারে কেজি প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সেগুলো, যার ফলে প্রেক্ষাপট অনেক পাল্টে গেছে।
সাজিয়ারা, ঠুকরা, আরাজি, শোলুয়া, আমভিটা, ভোরাটিয়া এবং টিপনা গ্রামগুল থেকে উৎপন্ন কচুর লতিগুলো অন্যান্য জায়গার থেকে বেশ উন্নত হিসাবে ধরা হয়। কৃষকেরা বাংলা চৈত্র মাসের শুরুতে চাষ শুরু করে এবং সেগুলো সংগ্রহ করে আষাঢ়ের শেষ দিকে। বিভিন্ন জৈব সার ও কচুরিপানা সার হিসাবে ব্যাবহার করলে কচুর লতির অধিক ফলন সম্ভব।
বিভিন্ন সূত্রমতে, প্রতি একক হেক্টর থেকে চার থেকে পাঁচ টন কচুর লতি ফসল সংগ্রহ করা হয়। এই উপজেলার অধীনে ২০-২৫ হেক্টর জমি কচুর লতি চাষের অধীনে আনা হয়েছে বলেও তারা জানায়।
সরকারী বিএল কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ডুমুরিয়া উপজেলার সাজিয়ারা গ্রামের মনিরুজ্জামান শুভ (২৬) জানান, কৃষকেরা অনেক দিন ধরেই কচুর লতি চাষ করছে এখানে, কিন্তু এগুলোর দাম কম হওয়ায় তারা আগে খুব একটা আগ্রহী ছিল না। বর্তমানে বাজার দর ভাল হওয়ায় কৃষকেরা ব্যাপক আকারে লতি চাষ শুরু করেছে। এক মণ কচুর লতি চাষ করতে প্রায় ৮০০ টাকা লাগলেও তা বিক্রি করা হয় ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায়।
তিনি আরো জানান, তাদের বাসায় অতিথি আসলে তার পরিবার মাছ বা চিংড়ী দিয়ে কচুর লতি রান্না করে তাদের পরিবেশন করে। এখানে চাষ করা লতিগুলো প্রধানত ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগ ছাড়াও অন্যান্য বড় শহর গুলাতে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়।
করুন কণ্ঠে তিনি বলেন “ আমার দুঃখ দুর্দশা শুরু হয় ২০০২ সালে যখন আমার বয়স ১২। তখন সন্ত্রাসীদের গুলিতে আমার বাবা নিহত হন। আমি এবং আমার মা কিছুদিন পর গ্রাম ত্যাগ করতে বাধ্য হই ও পরে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে আমার ফিরে আসি।
পরে আমার বাবা এক বিঘা জমিতে আমন ধান চাষের পর কচুর লতি চাষ শুরু করি। প্রথমে সফল না হলেও পরে স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের অধীনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষ করতে শুরু করলে সফলতা আসা শুরু করে।“ বর্তমানে আমার নিজের এক বিঘা ও আরো ১৮ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আমি প্রতি বছর কচুর লতি চাষ করে ৩ লক্ষ টাকা আর অন্যান্য ফসল ফলিয়ে আরো ২ লক্ষ টাকা লাভ করি।
একই উপজেলার অধীনে ঠুকরা গ্রামের বাসিন্দা সুরেশ মল্লিক জানান, এখন কৃষকেরা বেশ উৎসাহ সহকারে কচুর লতি চাষ করছে আর তাই প্রতি বছর এর চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরো জানান যদি সরকার আমাদের সাহায্য সুবিধা প্রদান করে, আমি বিশ্বাস করি কচুর লতি চাষ দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।
এক সাক্ষাৎকারে ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিসার এমডি মোসাদ্দেক হোসেন প্রতিবেদককে জানান, এখানে কচুর লতি চাষ দ্রæত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত ৫ বছরে এর ফলন উল্লেখযোগ্য না হলেও এই বছরে কয়েকশো কৃষক তাদের জমি কচুর লতি চাষের আওতায় এনেছে। আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা কচুর লতি চাষ প্রসঙ্গে কৃষকদের পরামর্শ ও উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের সকল ধরনের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত আছি।