কক্সবাজার সৈকতে ভেসে এল বিপুল বর্জ্য ও জলজ প্রাণী
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্লাস্টিক, ছেঁড়া জাল ও রশিসহ নানা ধরনের বর্জ্য ও জলজ প্রাণী ভেসে এসেছে, যা কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
পরিবেশ সংশ্লিষ্টদের ধারণা, গভীর সাগরে চলাচলকারী জাহাজ ও মাছধরা ট্রলার থেকে এসব বর্জ্য সাগরে ফেলা হয়েছে; যা ভেসে সৈকতে এসেছে।
আহত শতাধিক কাছিম উদ্ধার করে সাগেরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সেভ দ্যা ন্যাচার অব বাংলাদেশ’-এর চেয়ারম্যান আ. ন. ম. মোয়াজ্জেম হোসেন জানিয়েছেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন জানান, সৈকতে বর্জ্য ভেসে আসার কারণ তদন্তে জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শনিবার রাত থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে শুরু হিমছড়ি পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকা সৈকতজুড়ে ভেসে এসেছে নানা ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য, ছেঁড়া স্যান্ডেল, মদের বোতল, মাছ ধরার ছেঁড়া জাল ও রশি। এছাড়া রয়েছে সামুদ্রিক কাছিমসহ নানা জলজ প্রাণী।সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, সৈকতের অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এসব বর্জ্য। স্থানীয়দের অনেকে এসব বর্জ্য থেকে সংগ্রহ করছেন প্রয়োজনীয় উপকরণ। সামুদ্রিক কাছিমসহ কিছু জলজপ্রাণীও দেখা গেছে।
বর্জ্যের দূষণ ও মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে সামুদ্রিক প্রাণীগুলোর মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবেশবাদীদের ধারণা।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সেভ দ্যা ন্যাচার অব বাংলাদেশ’-এর চেয়ারম্যান আ. ন. ম. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বর্জ্য ভেসে আসার খবরে রোববার সকালে সংগঠনের কয়েকজন সদস্যদের নিয়ে সমুদ্র সৈকতে যান তিনি। এসময় পুরো সৈকতজুড়ে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখেন।“সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্যগুলোর ধরন দেখে বোঝা যায় এগুলো বাংলাদেশের নয়। গভীর সাগরে চলাচলকারী বিদেশি জাহাজ এবং মাছ ধরার ট্রলার থেকে এসব বর্জ্য ফেলা হয়েছে।”
তিনি বলেন, এসব বর্জ্যরে দূষণ ও মাছ ধরার ছেঁড়া জালে আটকা পড়ে সামুদ্রিক কাছিমসহ কিছুসংখ্যক জলজ প্রাণী মারা পড়েছে। অন্তত ৩০ টনের মতো বর্জ্য সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, “অন্তত ২০টি কাছিম ও একটি ডলফিনকে সৈকতে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আহত অবস্থায় পড়ে থাকা শতাধিক কাছিমকে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করে সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে।”
কোনো জাহাজ বা মাছধরা ট্রলার থেকে এসব বর্জ্য সাগরে ফেলা আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন বলে জানান মোয়াজ্জেম হোসেন।
“কোনো দেশের জলসীমায় যেকোনো ধরনের রাসায়নিক ও শিল্প বর্জ্য ফেলে দূষণ করা যাবে না।”এ ব্যাপারে পরিবেশে অধিদপ্তর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাজমুল হুদা এবং উপকূলীয় এলাকার প্রাণী দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপকূলীয় বনবিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় বনকর্মকর্তা গোলাম মওলার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন জানান, সৈকতের বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ভেসে আসার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
“এর আসার কারণ জানতে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে প্রশাসন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি ঘটনার কারণ খুঁজে বের করে প্রতিবেদন আকারে জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেবে।”কমিটিতে জেলা প্রশাসন ছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর করণীয় নির্ধারণ এবং ঘটনায় দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ আকারে চিঠি দেওয়া হবে।