কক্সবাজারে মোরশেদ হত্যা: পরিকল্পনাকারীসহ গ্রেফতার ৫
কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে বহুল আলোচিত মোরশেদ আলী ওরফে মোরশেদ বলী (৪০) হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাবের দাবি, আসামিরা মোরশেদ বলী হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
র্যাব-৭, চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, গত ৭ এপ্রিল পিএমখালী চেরাংঘর ষ্টেশনে কতিপয় দুষ্কৃতী এলোপাতাড়ি ভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে মোরশেদকে হত্যা করে। হামলাকারীরা স্থানীয় ভাবে চিহ্নিত এবং সন্ত্রাসী হওয়ায় কেউ তাদের বাধা দেয়নি।
পরবর্তীতে স্থানীয়রা মুমূর্ষু মোরশেদকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। জনসম্মুখে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই জাহেদ আলী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় ২৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৮-১০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা (নং ১৭/২২৭) দায়ের করেন।
র্যাব জানায়, ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা পিএমখালী ইউনিয়নের ১০ নং পানি সেচ স্কিম পরিচালনা করে আসছিলেন। আসামিরা জোর করে তা নিজেদের দখলে নিতে চাইছিল, যাতে চাষিদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা যায়।
এর জের ধরে বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদ করায় মোরশেদকে বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। পরবর্তীতে তাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
র্যাব আরো জানায়, ঘটনার দিন বিকেলে ইফতার সামগ্রী কিনতে চেরাংঘর ষ্টেশনে যান মোরশেদ। এ সময় দুষ্কৃতীরা দুই দিকের রাস্তা বন্ধ করে তাকে মাটিতে ফেলে দেয় এবং কিরিচ দিয়ে মাথায় জখম করে। পরে আসামি আবদুল্লাহ (৩০) ও আব্দুল আজিজ (২৮) লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মোরশেদকে আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
এরপর আসামি মাহমুদুল হক কিরিচ দিয়ে মোরশেদের ডান হাতের কব্জি প্রায় বিছিন্ন করে ফেলেন। এছাড়া অপর আসামি মোহাম্মদ আলী (৪৫) মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য হাতুড়ি দিয়ে মোরশেদের অণ্ডকোষে আঘাত করেন।
এ সময় বাজারের লোকজন মোরশেদকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে আসামি মোহাম্মদ আলী আগ্নেয়াস্ত্র বের করে ১৫-২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। উপস্থিত লোকজন ঘটনার ভিডিও করলে তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় এবং ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয় আসামিরা। এমনকি রোজাদার মোরশেদ ইফতার পর্যন্ত বাঁচার আকুতি জানালেও আসামিরা তাকে বাঁচতে দেয়নি।
আসামি মাহমুদুল হক ছিলেন এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। তিনি সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন এবং পরিবারের প্রধান হয়ে সবার সঙ্গে পরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, যা একাধিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। পাশাপাশি এই ঘটনার মদদদাতা হিসেবে মাহমুদুল হকের ভাই নুরুল হক নেপথ্যে কাজ করেন বলে জানান র্যাবের অধিনায়ক।
র্যাব জানায়, এ ঘটনার পর গ্রেফতার এড়াতে আসামিরা আত্মগোপন করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষে গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়াতদন্ত শুরু করে।
এক পর্যায়ে র্যাব জানতে পারে, মামলার অন্যতম প্রধান পাঁচ আসামি টেকনাফ উপজেলায় আত্মগোপন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) ভোর চারটার দিকে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত এজাহার নামীয় ২ নং আসামি মোহাম্মদ আলী, ৪ নং আসামি মোহাম্মদুল হক (৫২), ১৮ নং আসামি আবদুল্লাহ (৩০), ১৯ নং আসামি আব্দুল আজিজ (২৮) ও নুরুল হককে (৫৩) গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করে। তারা জানায়, ১০ নং সেচ স্কিম পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে এলাকার প্রতিবাদী যুবক মোরশেদ পথের কাঁটা হয়ে উঠেছিল। প্রতিবাদের কারণে আসামিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরিকল্পিত ভাবে মোরশেদকে হত্যা করা হয়।
গ্রেফতারদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ।