কক্সবাজারে আটকা পড়েছেন ‘৩০ হাজার’ পর্যটক
পরিবহন ধর্মঘটে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা ‘অন্তত ৩০ হাজার’ পর্যটক আটকা পড়েছেন। আর ধর্মঘটের কারণে মৌসুমের শুরুতে পর্যটক আসা বিঘ্নিত হওয়ায় নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করছেন পর্যটনশিল্পের লোকজন।
আটকা পড়া পর্যটকদের দুর্ভোগ লাঘবে তাদের কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সামাজিক কর্মকাণ্ড হিসেবে জেলা পুলিশ বিশেষ এই ব্যবস্থা নিয়েছে। এ জন্য পুলিশ কোনো খরচ নিচ্ছে না।
সরকার বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর বৃহস্পতিবার বিকালে হঠাৎ করে ধর্মঘটে যাওয়ার ঘোষণা দেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এরপর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগাযোগে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাবইকে।
পুলিশ কর্মকর্তা রফিকুল বলেন, ধর্মঘটের কারণে কক্সবাজারে অন্তত ৩০ হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ে রওনা হতে না পেরে তারা চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। বিষয়টি নজরে আসার পর জেলা পুলিশ নিজস্ব বাসে বিনা ভাড়ায় তাদের চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ লাইন্স থেকে ৪৪ জন পর্যটক নিয়ে প্রথম বাসটি চট্টগ্রাম যায় জানিয়ে তিনি বলেন, রাতে মোট চারটি বাসে ১৬৮ জন এবং সকালে তিনটি বাসে ১৪৪ জন রওনা হন। এ পর্যন্ত মোট নিবন্ধন করেছেন প্রায় পাঁচশ পর্যটক। এ জন্য জেলা পুলিশ লাইন্স গেইটে নিবন্ধনকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যেকোনো পর্যটক তার হোটেল বুকিং ও ছাড়ার রশিদ দেখিয়ে নাম নিবন্ধন করাতে পারবেন।
বাস চলাচল স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।শনিবার বিকালে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোন, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, গাড়ির জন্য অসংখ্য পর্যটকরা ঘুরছেন। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় তারা ফিরতে পারছেন না। তাদের অনেকে হোটেল কক্ষ ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকের আবার বাজেট শেষ হওয়ায় পড়েছেন চরম বিপাকে।
কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনে গাড়ার টিকেটের জন্য দৌঁড়ঝাপ করা ঢাকার গাবতলীর বাসিন্দা মামুনর রশিদ বলেন, তিনি সরকারি চাকরি করেন। পরিবার নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হন। কক্সবাজার পৌঁছার পর পরিবহন ধর্মঘটের কথা জানতে পারেন। রোববার সকালের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছে অফিসের কাজে যোগ দেওয়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন তিনি।
মুন্সিগঞ্জ থেকে মা-বাবাসহ পরিবারের সাত সদস্যের সঙ্গে বেড়াতে এসেছেন আমেরিকা প্রবাসী আব্দুল কাইয়ুম।
তিনি বলেন, আমেরিকায় ফেরার জন্য তার বিমানের টিকেট বুক করা রয়েছে। রোববারের মধ্যে ঢাকায় ফিরতে না পারলে টিকেটের টাকার ক্ষতি হবে। তাই অতিরিক্ত ১৮ হাজার টাকায় মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
বিশেষ প্রয়োজন থাকায় কেউ কেউ দ্বিগুণের বেশি ভাড়ায় মাইক্রোবাস বা অন্য ছোট পরিবহন ভাড়া করে রওনা হয়েছেন। কেউ আবার বিমানে কক্সবাজার ছেড়েছেন। কিন্তু আটকা পড়াদের মধ্যে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছে যাদের অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য নেই এবং ভ্রমণের জন্য নিয়ে আসা নির্দিষ্ট বাজেট শেষ হয়ে গেছে।অন্যদিকে ধর্মঘটের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও অনেক পর্যটক কক্সবাজার বেড়াতে আসতে পারছেন। এতে মৌসুমের শুরুতে পর্যটক আগমনে বিঘ্ন ঘটায় পর্যটন শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।
বাস বন্ধ থাকায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেকে কক্সবাজার আসতে পারছে না। এতে পর্যটনশিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হোটেল দি গ্র্যান্ড স্যান্ডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রহমান বলেন, ধর্মঘটের কারণে গাড়ি বন্ধ থাকায় কক্সবাজার ভ্রমণে ইচ্ছুক অনেকে আসতে পারছেন না। এতে হোটেল কক্ষের বেশ কিছু আগাম বুকিং বাতিল হয়েছে। আর নতুন বুকিংও বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীতে গত দুই বছর ধরে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন পর্যটন মৌসুমের শুরুতে ধর্মঘটের কারণে পর্যটক আগমন ব্যাহত হওয়ায় আবারও ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
তবে বেড়াতে এসে আটকা পড়া পর্যটকদের ফিরিয়ে নিতে জেলা পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ায় এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানান আব্দুর রহমান।