কংক্রিটের ওপর সবুজের ভেলা
দ. প্রতিবেদক
নগর আধুনিকায়নের নামে সবুজ হারাতে বসেছি আমরা। যেদিকে চোখ যায়, ইটপাথরে ঘেরা ভবন আর পিচ ঢালা অলিগলি, রাজপথ। সবুজ সাবাড় করেই বড় বড় অট্টালিকার আবির্ভাব হচ্ছে দিন দিন। এমন সময় কেউ কেউ সবুজের মায়ায় কনক্রিটের ওপর তৈরি করছেন সবুজের সমারোহ। যেখানে নিতে চায় স্বস্তির নিঃশ্বাস। কনক্রিটের নগরে ভবনের ছাদে তৈরি করা বাগান দেখে মনে হয় যেন শূন্যে ভাসছে সবুজের ভেলা।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে প্রায় ৪৪৫টি ছাদ বাগান রয়েছে। কংক্রিটের নগরে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে এখন অনেকে ছাদে বাগান তৈরির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। নগরীর ১৬ নং ওয়ার্ড বয়রা বাজারের ভেতরে ঢুকলেই নজর কাড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সেখ মনিরুল ইসলামের বাড়ির ছাদ। তিলে তিলে যেখানে গড়েছেন এমনই শাকসবজি, ফুল-ফলের বাগান। বাগানে বাহারি গাছের সঙ্গে আছে ঔষধি গাছও।
আছে দেশি-বিদেশি হরেক রকমের গাছ। যেন শহুরে জীবনে সবুজের সজীবতার মধ্যে বেঁচে থাকতেই তিনি গড়েছেন এই প্রয়াস। ছাদের চারপাশ দিয়ে রয়েছে বিভিন্ন রংবেরঙের টব, রঙের খালি বালতি এবং ট্রে। সেখানে রয়েছে মাল্টা, এডিনিয়াম, কয়েক প্রজাতির আম, কমলা, লেবু, পেয়ারা, কাগজিলেবু, তেঁতুল, সফেদা, আঙুর, বেল, আমড়া, বাতাবিলেবু, কদবেল, নাশপাতি, বেগুন, লালশাক, মিষ্টিকুমড়া, মরিচ, শাক, শিম, পাতাবাহার, বিভিন্ন ধরনের অর্কিড, ফলজ, বনজ, ভেজষ বা ঔষধি, শোভাবর্ধনকারী, দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় গাছ। ভালোবাসায় ছোঁয়ায় তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন তার এ শখের বাগান। বাগানের গাছগুলো যেন তার নিজের সন্তানের মতো। বাগানের পাশেই তার বিশ্রামের জায়গাও করেছেন তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সেখ মনিরুল ইসলামের জানান, নিজের ব্যবসা রয়েছে। ছেলেরা দেখছে। এখন কাজ কমিয়ে ফেলেছি। কাজ শেষে এখানেই সময় দেই। ভালো লাগে। বছর দুয়েক হলো এ বাগানের বয়স। পরিবারে বিষমুক্ত শাকসবজি, ফলমূলের জোগানও দিচ্ছে এ বাগান। সবুজে ভরে রয়েছে বাড়ির ছাদ। দূর থেকে দেখা যায়। এক অন্যরকম পরিবেশ। এ ছাদ বাগান নিয়ে আরো কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু খুলনায় এসে গাছ লাগিয়ে ছিলেন। ৭১ মুক্তযুদ্ধ করেছিলাম পাক-হানাদারদেরকে তাড়াতে আর এখন যুদ্ধ করছি কংক্রিটের শহরে সবুজে ভরে দিতে।
খুলনা মেট্রোপলিটন (লবণচরা) বয়রা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রশান্ত মন্ডল জানান, আধুনিক একটি ভবনের ছাদে তিনি অনেক আগ্রহ করে বাগান করেছেন। ভালো ফলও পাচ্ছেন। এখন ছাদজুড়ে শাকসবজি, ফলমূল এবং সৌন্দর্যের এক নতুনমাত্রা যোগ করেছে এ বাগান।
খুলনা মেট্রোপলিটন (লবণচরা) কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন ফেরদৌস জানান, নগরীর মানুষ এখন নতুন কোনো বাড়ি নির্মাণ করলে সেই বাড়ির ছাদে বা কার্নিসে গাছ লাগাচ্ছে। এটি ভালো দিক। যে সবাই সবুজকে ভালোবাসছে। আমরা কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকি। ফলে দিন দিন এ ধরনের বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রত্যেক বাড়ির মালিক যদি এভাবে তার ছাদে বাগান তৈরি করেন তাহলে যান্ত্রিক শহরেও সবুজের আভা পাওয়া যাবে।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ