ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ
ব্যাটসম্যান-বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে এক ম্যাচ বাকী রেখেই ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ। আজ ডাবলিনে টুর্নামেন্টের পঞ্চম ও লিগ পর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ৩ খেলা শেষে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে বাংলাদেশ। ৪ খেলায় ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩ খেলায় ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড। আগামী ১৭ মে টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বাংলাদেশের ফাইনাল নিশ্চিতের ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্রুত গতিতে রান তোলার চেষ্টা করেন ক্যারিবীয় দুই ওপেনার শাই হোপ ও সুনীল অ্যামব্রিস। তবে ষষ্ঠ ওভারে দু’জনকে বিচ্ছিন্ন করে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। আগের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৬ বলে ১৪৮ রান অ্যামব্রিসকে শিকার করেন ম্যাশ। ১৯ বলে ২৩ রান করেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নিতে বেশি সময়ক্ষেপন করেনি বাংলাদেশ। তিন নম্বরে নামা ডোয়াইন ব্রাভোকে ৬ রানে থামিয়ে দেন বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ।
৫৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলকে চাপমুক্ত করার চেষ্টা করেন প্রথম দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা হোপ ও রোস্টন চেজ। কিন্তু হোপ-চেজকে একত্রে একসাথে বেশি দূর যেতে দেননি বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। ১৯ রান করা চেজকে বিদায় দেন তিনি। কিছুক্ষণবাদে আবারো ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে আঘাত হানেন ফিজ। পাঁচ নম্বরে নামা জনাথন কার্টার ৩ রান করে মুস্তাফিজের শিকার হন। এতে ৯৯ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এঅবস্থায় দলের মুখে হাসি ফোটান হোপ ও অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। পঞ্চম উইকেটে বড় জুটি গড়ে তুলেন তারা। এতে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখতে থাকে ক্যারিবীয়রা। সেই সাথে টুর্নামেন্টে তৃতীয় সেঞ্চুরির পথে হাটতে থাকেন হোপ। কিন্তু হোপের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান বাংলাদেশের দলপতি মাশরাফি। ৮৭ রানে হোপকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান ম্যাশ। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০৮ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান হোপ।
ক্যারিবিয়দের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬২ রান করা হোল্ডারও শিকার হন মাশরাফির। ৭৮ বল মোকাবেলায় তিনটি বাউন্ডারি এবং একটি ওভার বাউন্ডারি হাকিয়ে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি।
হোপ-হোল্ডারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেল-এন্ডারদের ক্রিজে টিকতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৭ রানের সংগ্রহ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান ৪৩ রানে শিকার করেন ৪ উইকেট। মাশরাফি নেন ৩ উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট শিকার করেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ।
জয়ের জন্য ২৪৮ রানের টার্গেটে শুরুতেই ভালো সূচনা পায় বাংলাদেশ। ৫২ বলে ৫৪ রান তোলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। তামিম ২১ রানে থামলেও হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন সৌম্য। এরপর অবশ্য ইনিংসটি বড় করতে পারেননি সৌম্য। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৭ বলে ৫৪ রান করেন সৌম্য।
মাঝে সাকিব যথার্থ সঙ্গ দেন সৌম্যকে। দ্বিতীয় উইকেটে সৌম্য-সাকিব ৫২ রানের জুটি গড়েন। এরমধ্যে সাকিবের অবদান ছিলো ২৯ রান। তিন বল ও এক রানের ব্যবধানে বিদায় নেন সৌম্য-সাকিব। ২১তম ওভারেই দু’জনকে শিকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে খেলায় ফেরানোর পথ দেখান ওয়েস্ট ইন্ডিজের অফ-স্পিনার অ্যাশলে নার্স।
কিন্তু দ্রুতই ম্যাচের লাগাম বাংলাদেশের পক্ষে নিয়ে নেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিথুন। চতুর্থ উইকেটে ৮৩ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জয়ের পথ দেখান তারা। আবারো হাফ-সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে থামেন মিথুন। ৪৩ রান করেন তিনি।
মিথুন যখন আউট হন তখন জয় থেকে ৫৮ রান দূর দাড়িয়ে বাংলাদেশ। হাতে বল ছিলো ৮১টি। এরপর ৫০ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে যান মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়তে পারেননি মুশফিক। দলীয় ২৪০ রানে আউট হন তিনি। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭৩ বলে ৬৩ রান করেন মুশফিক।
তবে সাব্বির রহমানকে নিয়ে ১৬ বল বাকী রেখে দলকে জয় এনে দেন মাহমুদুল্লাহ। ১টি করে চার-ছক্কায় ৩৪ বলে অপরাজিত ৩০ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। অন্যপ্রান্তে কোন বল খেলার সুযোগই পাননি সাব্বির। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নার্স ৫৩ রানে ৩ উইকেট নেন। প্রথম পর্বে ক্যারিবীয়দের ৮ উইকেটে হারিয়েছিলো মাশরাফির দল।
আগামী ১৫ মে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড।