ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকদের পালানোর ভুয়া খবর দেখে সাংবাদিককে আদালতে তলব
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে আলোচিত ‘ওয়াহেদ ম্যানশন’র মালিক দুই ভাইর দেশ ছেড়ে পালানোর ভুয়া খবর দেখে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদককে তলব করেছে হাই কোর্ট।
মঙ্গলবার ও্ই প্রতিবেদন প্রকাশের পর গতকাল ওই দুই ভাইকে আদালতে ডেকে আনার পর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের বেঞ্চ তলবের এই আদেশ দেয়।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদককে তার সংবাদের ব্যাখ্যা নিয়ে আগামী ৩ এপ্রিল আদালতে হাজির হতে হবে।
এই আদালতেই গত সোমবার আত্মসমর্পণ করে তিন সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়েছিলেন অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ওয়াহেদ ম্যানশনের দুই মালিক মো. হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদ।
ওই্ দিনই ‘ওয়াহিদ ম্যানসনের দুই মালিক বিদেশে পালিয়েছেন’ শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনলাইন সংস্করণে খবর প্রকাশ হয়; পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার ছাপা কাগজের শেষ পৃষ্ঠায়ও তা প্রকাশিত হয়।
ছাপা কাগজে প্রকাশিত এই খবরটি মঙ্গলবারই আদালতের নজরে আনেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল।
আদালত তখন দুই ভাইয়ের জামিনের আদেশটি ‘রিকল (পুনরায় আহবান)’ এর আবেদন করতে বলে। একই সঙ্গে দুই ভাইকেও আদালতে হাজির করতে তাদের আইনজীবীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালতের নির্দেশে অনুযায়ী দুই ভাই হাসান ও সোহেলকে নিয়ে আদালতে হাজির হন তাদের আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী।
তখন বিচারক বলেন, “আমরা যাদের জামিন দিয়েছি এরাই কি সেই ব্যক্তি?”
আইনজীবী মেহেদী বলেন, “এরাই সেই ব্যক্তি, যারা এ মামলার আসামি।”
দুই ভাইয়ের পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র আদালতের সামনে উপস্থাপন করেন তাদের আইনজীবী।
আদালত তা যাচাইয়ের পর দুজনের জামিন বহাল রেখে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদককে তলব করে।
জাহিদ সারোয়ার কাজল বলেন, “আদালত আগামী ৩ এপ্রিল আদালতে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে ওই প্রতিবেদককে প্রকাশিত ওই খবরের ব্যাখ্যা দিতে বলেছে।”
গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ ওই অগ্নিকান্ডে এ পর্যন্ত ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিকান্ডের কারণ হিসেবে প্রথমে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কথা বলা হলেও তার কোনো আলামত মেলেনি জানিয়ে তদন্তকারীরা এখন বলছেন, ওই মোড়ের ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল বলে তারা ধারণা করছেন।
ওই ভবনের দোতলার পুরোটা প্লাস্টিক সামগ্রীর ও প্রসাধনীর গুদাম ছিল। বেইজমেন্টে ছিল বিপুল পরিমাণ রাসায়নিকের মজুদ। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় যে ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ২৪টি মৃতদেহ পাওয়া যায় ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলার সিঁড়ি ঘরে।
সেদিনের অগ্নিকান্ডে নিহত ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের বাসিন্দা জুম্মনের (৫২) ছেলে মো. আসিফ ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজার মডেল থানায় একটি মামলা করেন।
ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক মো. হাসান ও সোহেল ওরফে শরীফসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে ‘অবহেলাজনিত প্রাণনাশ’ অভিযোগ আনা হয় সেখানে।
ও্ই মামলায় হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন হাজী ওয়াহেদের দুই ছেলে।