ঐতিহ্য ধরে রেখে আধুনিক ঢাকার প্রতিশ্রুতি ইশরাকের ইশতেহারে
পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে ‘আধুনিক বাসযোগ্য ঢাকা’ গড়ে তোলার ১৬ দফা প্রতিশ্রুতিতে নির্বাচনী ইশতেহার সাজিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন।
তার ভাষায়, আদর্শ শহর হচ্ছে সেই শহর যেখানে চাওয়ার আগেই ‘উত্তম নাগরিক সেবা’ নাগরিকদের দুয়ারে হাজির হবে। সামাজিক, পারিবারিক ও নাগরিক মূল্যবোধের চর্চা হবে সুদৃঢ়। মেয়র হওয়ার সুযোগ পেলে তেমন নগরই তিনি গড়তে চান।
অবিভক্ত ঢাকার শেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।
ধানের শীষের এই প্রার্থী বলেন, “দুঃসময়ের ক্ষতচিহ্ন মুছে ফেলে নতুন করে স্বপ্ন সাজাবার জন্য পরিবর্তনের ডাক নিয়ে আমি আপনাদের খেদমতে হাজির হয়েছি।”
যুক্তরাজ্যের হার্টফোর্ডশায়ার ইউনিভার্সিটিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে আসা ইশরাক কীভাবে ‘গর্বিত ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার সম্মিলনে’ ঢাকাকে সবার বাসযোগ্য একটি ‘বিশ্বমানের অত্যাধুনিক মহানগরী’ হিসেবে গড়ে তোলার কথা ভাবছেন?
তিনি বলছেন, নির্বাচিত হলে তিনি ঢাকা ওয়াসাসহ রাজধানীতে সেবা প্রদানকারী সব সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে সুপেয় পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করা, জলাবদ্ধতা দূর করা, পয়ঃনিষ্কান ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করবেন।
নাগরিক সেবার কর্মকাণ্ড ওয়ার্ড পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ করার পরিকল্পনা তুলে ধরার পাশাপাশি নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাতে সড়কে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিও তিনি দিচ্ছেন।
ইশরাক বলছেন, গণশুনানির মাধ্যমে নগরবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে তিনি সিটি কর্পোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করবেন। জন্ম-মৃত্যু সনদ, ট্রেড-লাইসেন্স এবং অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করবেন।নগরীর বাজারগুলোর আধুনিকায়ন এবং পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দেবেন। আর নাগরিকদের করের টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে বছরে দুইবার করদাতাদের সামনে সেই হিসাব দেবেন।
সস্তায় বিষমুক্ত ও ভেজালমুক্ত তাজা খাবারের ব্যবস্থা করতে নগরীর বিশেষ বিশেষ স্থানে ‘কৃষক মার্কেট’ ও ‘নাইট মার্কেট’ স্থাপন করতে চান ধানের শীষের প্রার্থী।
তিনি বলেছেন, নির্বাচিত হলে তিনি অঞ্চলভিত্তিক কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করবেন। ওয়ার্ড ভিত্তিক ব্যায়ামাগারের আধুনিকায়ন করবেন। প্রত্যেক ওয়ার্ডে আধুনিক শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করবেন। প্রতিটি স্থাপনায় থাকবে মাতৃদুগ্ধ কক্ষ।
যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ‘ডিএনডি’ বাঁধের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধ এলাকার পানি শীতলক্ষ্যা নদীতে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইশরাক।
তিনি বলেছেন, মেয়র হলে তিনি বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত করা, নদীর তীর রক্ষা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্প নেবেন এবং নদীভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র, নৌ পর্যটন ব্যভস্থা গড়ে তুলবেন। শিশু পার্কসহ বিনোদন কেন্দ্রের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করবেন। পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর ঐতিহ্য ও স্থাপত্যশৈলী অক্ষুণন্ন রেখে সংস্কার করবেন।সিটি করপোরেশনের সকল উন্মুক্ত উদ্যান, নদী ও খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা, নিয়মিত ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, খেলাধুলার আয়োজন করা,
যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ফুটব্রিজ, চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন, ওয়ান স্টপ বাস সার্ভিস চালু, আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল নির্মাণ, বৈদ্যুতিক বাস ও স্কাইওয়ে নির্মাণ, সাইকেল ও মোটরসাইকেলের জন্য পৃথক লেইন, জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় নিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে ৫০ বছর মেয়াদী সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে ইশরাকের ইশতেহারে।
বিএনপির এই প্রার্থী বলেছেন, দল-মত ও জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মহানগরীর সকল জাতি-গোষ্ঠীর সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্ম-কর্মের অধিকার নিশ্চিত করতে তিনি কাজ করবেন।
“প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবেন। কোনো নাগরিকের ধর্মবিশ্বাসকে আঘাত করতে দেওয়া হবে না। ধর্ম যার যার, এ মহানগরী সবার।… সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর ঢাকা মহানগরীর এই ঐতিহ্য কোনো রকমেই বিনষ্ট হতে দেওয়া হবে না।”
মেয়র নির্বাচিত হয়ে নগরভবনে বসার সুযোগ পেলে প্রথম ১০০ দিনে কী কী করবেন- তারও একটি রূপরেখা ইশতেহারে দিয়েছেন ইশরাক। জরুরি ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চিহ্নিত করে এই সময়ের মধ্যে তিনি বাস্তবায়ন করবেন।
দুর্নীতিমুক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে আমাদের নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমি প্রতিজ্ঞা করছি আপনাদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বস্তরে দুর্নীতিমুক্ত সেবা প্রদান নিশ্চিত করব।”
নিজের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে সাদেক হোসেন খোকার ছেলে বলেন, “আমি ঢাকার সন্তান, আপনাদেরই সন্তান, আপনাদের আপনজন। এই ঐহিত্যবাহী নগরীর সন্তান হিসেবে আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হচ্ছে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ের বিশ্বমানের বাসযোগ্য আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলা। এই লক্ষ্যে আমার নিজস্ব চিন্তা চেতনা, স্বপ্ন-ভাবনা ও প্রত্যাশার কাঠামো আপনাদের সমীপে তুলে ধরেছি। আপনাদের সহযোগিতা পেলে তা আরো বাস্তব, প্রায়োগিক ও নাগরিকবান্ধব করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।”
ইশরাকের ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
জোটের শরিকদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, বিকল্পাধারার একাংশের সভাপতি নুরুল আমিন ব্যাপারী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।