এ সময় সর্দি-গলা ব্যথা হলে সারাতে যা করবেন
চলছে বসন্তকাল। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময়ে আবহাওয়ায় মিশে থাকে নানা রোগের জীবাণু। যার মধ্যে হিউম্যান রাইনোভাইরাস (এইচআরভি) অন্যতম। ঋতু পরিবর্তনের কারণে অনেকেই সর্দি-কাশি-গলা ব্যথার সমস্যায় ভোগেন। রাইনোভাইরাসই এর জন্য দায়ী।
চিকিৎসা গবেষণা অনুসারে, বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্করা প্রতি বছর ২-৪ বার ও শিশুরা ৫-৭ বার সর্দিতে ভোগে। এটি মোটামুটিভাবে এক বছরের মধ্যে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে মিলে যায়।
প্রতিবার যখন আমরা ঋতু পরিবর্তন লক্ষ্য করি, পরিবেশে অ্যালার্জেনের সংখ্যাও বাতাসে প্রায় ২০০ এরও বেশি ভাইরাস ভেসে বেড়ায়। সর্দি-কাশির সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলো হলো-
>> নাক বন্ধভাব
>> গলা ব্যথা
>> হাঁচি
>> চোখ দিয়ে পানি পড়া
>> নাক থেকে গলা দিয়ে শ্লেষ্মা বের হওয়া
>> উচ্চ জ্বর বা পেশি ব্যথা
ঋতু পরিবর্তনে কেন ঠান্ডা লাগে?
এ বিষয়ে ভারতের হাওড়ার নারায়না মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের জেনারেল মেডিসিন বিভাগের পরামর্শদাতা ডা. নীলাঞ্জন পাত্রনাবিস জানান, যখনই ঋতু পরিবর্তন হয় তখন পরিবেশের তাপমাত্রারও পরিবর্তন ঘটে।
অতিরিক্ত গরম বা বৃষ্টির দিনের স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া কিংবা শীত আসতেই বিভিন্ন গোষ্ঠীর ভাইরাসের বিকাশ ঘটে। যা পরে সংক্রামক রোগ ছড়ায়।
ভাইরাসের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হল হিউম্যান রাইনোভাইরাস (এইচআরভি), যা সব সর্দি-কাশির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ঘটায়। এগুলো শীতল আবহাওয়ায় যেমন- বসন্ত ও শীতকালে বেড়ে যায়।
গ্রীষ্মকালে, ঋতুগত অ্যালার্জিতে যারা ভোগেন তারা পরাগ, ছাঁচ বা ঘাসের কাছাকাছি আসলেই নাক দিয়ে পানি পড়া বা চোখ চুলকানি হতে পারে। তাদের ইমিউন সিস্টেম এই অ্যালার্জেনের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, যা তাদের ভাইরাল আক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়ায়।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ফ্লু সৃষ্টি করে যা শীতকালে বাতাসের মতো ঠান্ডা ও শুষ্ক হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভাজিত হয় ও ছড়িয়ে পড়ে। তবে কিছু ছোটখাটো সতর্কতা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনার পক্ষে মৌসুমি অসুস্থতা এড়ানো সম্ভব।
রাইনোভাইরাসের প্রায় ১০০টি পরিচিত স্ট্রেন আছে, যার অর্থ এর বিরুদ্ধে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করা যায় না। যেহেতু ভাইরাসগুলো ক্রমাগত এক ফ্লু ঋতু থেকে অন্য ঋতুতে পরিবর্তিত হয়, তাই আপনার সুরক্ষার জন্য একটি ফ্লু শট নেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
রাইনোভাইরাস শরীরের বাইরে ৩ ঘণ্টা বেঁচে থাকে। কখনো কখনো দরজার নব বা আলোর সুইচের মতো স্পর্শযোগ্য পৃষ্ঠগুলোতে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বাঁচে এই ভাইরাস।
নিয়মিত হাত ধোঁয়া ও মুখে-চোখে বারবার স্পর্শ না করার মাধ্যমে সংক্রমণ এড়িয়ে চলা যায়। এছাড়া ঘরে কেউ এ সময় সর্দি-জ্বরে ভুগলে তার আশপাশ থেকে দূরে থাকুন ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা বজায় রাখুন।
বিভিন্ন সংক্রমণ এড়াতে নিয়মিত ব্যায়ামের বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের ভাইরাল সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে, কারণ এই অভ্যাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
এর পাশাপাশি সুষম খাদ্য খাওয়া, প্রচুর ঘুমানো ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে আপনি মৌসুমি অসুস্থতাকে আরও ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারবেন।
সর্দি ও গলাব্যথা সারানোর ঘরোয়া উপায়
>> লবণ পানি দিয়ে গার্গল করুন। এতে গলা প্রশমিত হয় ও জমাট বাধা শ্লেষ্মা সহজেই নরম হয়ে বেরিয়ে আসে।
>> গরম চা পান করুন। চায়ে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শারীরিক বিভিন্ন প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
>> একটি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন। যা ঘরের বাতাসে আর্দ্রতা যোগ করে। এটি গলা ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।
>> প্রচুর বিশ্রাম নিন ও হাইড্রেটেড থাকুন।
>> ঘরোয়া প্রতিকার মানার পরও গলা ব্যথা না সারলে কাশির সিরাপ সেবন করতে পারেন।
>> সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে থাকলে ন্যাসাল ড্রপ ব্যবহারে সাইনাসনালী আর্দ্র থাকে। প্রয়োজনে অ্যাসেনসিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়াও বেশ কিছু শ্বাসযন্ত্রের উপযোগী ব্যায়াম করলে উপকার মিলবে।
>> এসবের পাশাপাশি বেশি করে ভিটামিন সি জাতীয় ফল যেমন আমলকি খাওয়া অভ্যাস করুন। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।