এরদোয়ানের কবিতায় ক্ষেপেছেন ইরানিরা
গত বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে এক সামরিক প্যারেডে অংশ নেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। সম্প্রতি নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে আজারবাইজানের বিজয় উদযাপনের অংশ হিসেবে ওই প্যারেডে অংশ নেন এরদোয়ান। সেখানেই তার আবৃত্তি করা এক কবিতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইরানিরা। খবর আল জাজিরার।
আরাস নদী কীভাবে আজেরি (আজারবাইজানের ভাষা) ভাষার মানুষদের আজারবাইজান ও ইরানকে পৃথক করেছে তা নিয়ে এরদোয়ানের কবিতায় দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া ১৮৮০ সালের দিকে প্যান-টার্কিজম আন্দোলনের প্রসঙ্গও কবিতায় রয়েছে। ওই আন্দোলনে সকল তুর্কীদের একত্র করার মতবাদ প্রচার করা হয়েছিল।
কবিতায় এরদোয়ান বলেন, ‘তারা আরাস নদী বিভক্ত করেছে আর তা পূর্ণ করেছে পাথর ও রড দ্বারা। আমি তোমাদের কাছ থেকে আলাদা হবো না। তারা আমাদের জোর করে আলাদা করেছে।’
এই কবিতা নিয়ে ইরানিদের ক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ আরও ভালোভাবে বুঝতে ২শ বছর আগের রাশিয়া-পার্সিয়ান যুদ্ধের প্রসঙ্গ আনতে হবে। ওই যুদ্ধ সমাপ্ত হয় একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে যা ‘ট্রিটি অব টার্কিমেনচি’ নামে পরিচিত।
এই চুক্তির ফলে দক্ষিণ ককেশাসের বিশাল অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পায় রাশিয়া এবং আরাস নদীকে ইরান ও তুরস্কের সীমানা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এই অঞ্চলগুলো বর্তমানে আজারবাইজান, আর্মেনিয়া ও তুরস্কের অংশে পড়েছে। চুক্তিটি ইরানিদের কাছে একটি লজ্জাজনক বিষয় হিসেবে ধরা হয়।
ইরানে প্রায় কয়েক লাখ আজেরি ও হাজার হাজার আর্মেনীয় বংশোদ্ভুত জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। ইরানে বসবাসরত লাখ লাখ আজেরি বংশোদ্ভুত নাগরিকদের সঙ্গে এখনো সীমান্তের ওপারের আজেরিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে।
এরদোয়ানের কবিতার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট কি উপলব্ধি করতে পারেননি যে তিনি আজারবাইজানের সার্বভৌমত্বকে ছোট করেছেন? আমাদের ভালোবাসার আজারবাইজানকে নিয়ে কেউ কথা বলতে পারবে না।’
এর জের ধরে ইরানে নিয়োজিত তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকেও তেহরানে তলব করা হয়েছে। তার কাছে এরদোয়ানের বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়েছে ইরান।
শনিবার জাভেদ জারিফকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু ফোন করে জানিয়েছেন, কবিতাটি যে অসংবেদনশীল ছিল সে ব্যাপারে এরদোয়ান অবগত ছিলেন না। তিনি ভেবেছিলেন এটি লাচিন ও কারাবাখ সম্পর্কে।এদিকে, এরদোয়ানের প্রতি ইরানের ‘আপত্তিকর ভাষা’ ব্যবহার নিয়ে নিন্দাও জানিয়েছে তুরস্ক।