এমপি প্রভাবমুক্ত উপজেলা ভোটের তাগিদ মাহবুব তালুকদারের
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
সংসদ সদস্যদের প্রভাবমুক্ত করা না গেলে উপজেলা নির্বাচন ত্র“টিমুক্ত করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। পঞ্চম উপজেলা পরিষদের চতুর্থ ধাপের ভোট শেষে গতকাল রোববার নিজের উপলব্ধির কথা তুলে ধরেন এ নির্বাচন কমিশনার। এবার প্রায় সাড়ে ৩০০ উপজেলায় ভোট হল চার পর্বে। রোববার চতুর্থ ধাপে শতাধিক উপজেলায় ভোট হয়।
প্রতিটি ধাপে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ উঠে। এরইমধ্যে অন্তত দুই ডজন এমপিকে নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে বলা হয়। বরাবরের মতো রোববারও ভোট শেষে বিকালে নিজের কর্যালয়ে মাহবুব তালুকদার ‘নির্বাচন নিয়ে আমার কথা’ লিখিতভাবে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচন পরিষদের চতুর্থ ধাপের নির্বাচন সম্পন্ন হল। স্থানীয় সরকার হিসেবে ঘোষিত উপজেলা পরিষদে স্বায়ত্বশাসন নেই। সংসদ সদস্যদের আওতা থেকে উপজেলা পরিষদকে মুক্ত করা না হলে উপজেলা নির্বাচন কোনোক্রমেই সুষ্ঠু, স্বাভাবিক ও ত্র“টিমুক্ত হওয়া সম্ভব না। তবে এটি নিতান্তই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।
মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন বিষয়ে অনাস্থা থেকেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না।… বিগত দুই বছরে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের আত্মসমালোচনা প্রয়োজন। ওইসব নির্বাচনে যেসকল ভুলভ্রান্তি হয়েছে, সেগুলো পুনরাবৃত্তি রোধ করা দরকার।
যেসব কারণে আমরা ভোটারদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছি, সেসবের কারণ খুঁজে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত আবশ্যক। এমতাবস্থায় ভোটারদের উপর এ দায় চাপানো ঠিক নয়।
এ নির্বাচন কমিশনার মনে করেন, নির্বাচন বা ভোটদানে জনগণের যে অনীহা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাতে জাতি এক গভীর খাদের দিকে অগ্রসরমান। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই নির্বাচন। নির্বাচনবিমুখিতা গণতন্ত্রের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার নামান্তর। আমরা গণতন্ত্রের শোকযাত্রায় শামিল হতে চাই না। রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখা প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাচনে কমিশনের তৎপরতায় একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন রাখেন খোদ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। অনেকের মতে উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন জাগে, কতদূর যাওয়ার পর এই ঘুরে দাঁড়াবার বোধদয় ঘটল? উপজেলা নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্র বন্ধ করা এবং অনিয়মের জন্য পুলিশ ও অন্যান্য নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের সময় এহেন তৎপরতা দেখা যায়নি কেন? এই জিজ্ঞাসার জবাব খুঁজলে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রকৃত স্বরূপটি উদঘাটিত হবে।
মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি আবার বলি, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন সর্বোতভাবে নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত করা প্রয়োজন। রিমোট কন্ট্রোলে নির্বাচনকে কন্ট্রোল করা হলে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে- যা গণতন্ত্রের জন্য অনভিপ্রেত। এ জন্যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত একান্ত অপরিহার্য বলে উলেখ করেন তিনি। সবার জন্য সমান সুযোগ রেখে নির্বাচনি ব্যবস্থাপনার সংস্কার ও বাস্তবায়ন করে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন হলে রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের অনীহা অবশ্যই দূরীভূত হবে, বলেন তিনি।