এমপিও: শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে শিক্ষকদের কর্মসূচি স্থগিত
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করা হবে- শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে এমন আশ্বাস পেয়ে এমপিওভুক্তির দাবিতে চালিয়ে যাওয়া অবস্থান কর্মসূচি এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা।
এমপিওর দাবিতে তিনদিন ধরে (২১ মার্চ থেকে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান করা শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে রোববার বিকালে উপস্থিত হন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। মন্ত্রীর আশ্বাসের পর কর্মসূচি স্থগিত করা হয় বলে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী কথা দিয়েছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠকের ব্যবস্থা করে দেবেন। আমরা তার কথার উপর ভিত্তি করে এক মাসের জন্য কর্মসূচি স্থগিত করেছি। সোমবার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক রয়েছে জানিয়ে ডলার বলেন, সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হবে, তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কবে বৈঠক হতে পারে সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী কিছু বলেননি।
শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক না হলে কেন্দ্রীয় কমিটি বসে ফের আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান শিক্ষক নেতা ডলার। বিকাল সাড়ে ৩টায় কদম ফোয়ারার সামনে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মসূচিস্থলে উপস্থিত হয়ে দাবি মেনে নিতে এক থেকে দেড় মাস সময় চান শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষক-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে দীপু মনি বলেন, নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সমস্যা সম্পর্কে অবগত রয়েছি। এমপিওভুক্তির সঙ্গে সরকারের আর্থিক বিষয় জড়িত। সরকারের গত মেয়াদে এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে চারটি ক্রাইটেরিয়ায় অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। এর কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। হয়ত আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই এমপিওভুক্তির ব্যাপারে ঘোষণা দিতে পারব। এই সময়টুকু দিতে হবে আমাদের।
দীপু মনি বলেন, আপনারা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে বাড়ি ফিরে যান। এখানে আপনাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। কর্মস্থলে গিয়ে আপনারা কাজে মনোনিবেশ করুন। এমপিওভুক্তির জন্য যা করার তা করব।
সরকার আগামী অর্থবছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কাজ শুরু করতে পারবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির জন্য আমাদের সদিচ্ছার কোনো কমতি নেই।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বিনয় ভূষণ রায় বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা প্রধানমন্ত্রীর দেখা করতে চাই, সে পর্যন্ত আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছি।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে কয়েকটি শর্ত দিয়ে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে আলাদা বরাদ্দ রাখা হবে বলে বাজেটের আগে জানিয়েছিলেন তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
কিন্তু বাজেটে এমপিও নিয়ে কোনো ঘোষণা না থাকায় আমরণ অনশনে বসেন নন-এমপিও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যে গতবছর ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিওভুক্তির কার্যক্রম দ্রুত শুরুর কথা সংসদে জানান।
সেদিন তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সারাদেশে এক হাজার ৬২৪টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। অবশিষ্ট নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করতে ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা ২০১৮’ জারি করা হয়েছে।
গত বছরের মাঝামাঝি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ১৫ দিন অবস্থান এবং আরও ১৭ দিন ‘আমরণ অনশন’ করেন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। পরে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ বিশিষ্টজনদের অনুরোধে অনশন ভাঙেন তারা।