এমপিও: প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান আন্দোলনরত শিক্ষকরা
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুদিন ধরে অবস্থান নিয়ে থাকা নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা তাদের এমপিওভুক্তির দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান। তারা বলছেন, সরকার দাবি পূরণের যে আশ্বাস গতবছর দিয়েছিল, তা আদায় না করে এবার তারা ফিরে যাবেন না।
সরকারপ্রধানের আশ্বাস পেয়ে আট মাস আগে এই প্রেসক্লাবের সামনে থেকেই ১৭ দিনের অনশন ভেঙে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন এমপিওর বাইরে থাকা শিক্ষক কর্মচারীরা। কিন্তু সে আশ্বাস পূরণ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার তারা আবার রাস্তায় অবস্থান নেন।
দেশের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলের এই শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের পরিবারের সদস্য ও সন্তানদের নিয়েই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন প্রেসক্লাবের সামনে। ‘আমার মায়ের বেতন চাই, চাকরি আছে বেতন নাই’, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে কিছু বলতে চাই’, ‘উই ওয়ান্ট এমপিও’- এ রকম নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড রয়েছে তাদের হাতে।
শিক্ষক প্রতিনিধিরা বলছেন, সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ঢাকায় এ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। রাস্তার ওপরই তারা জুমার নামাজ পড়েছেন। এর মধ্যে দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠক হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার জানান, সচিব ফোন করে তাদের অফিসার্স ক্লাবে ডেকে নিয়ে কথা বলেন। সংগঠনের নির্বাহী পরিষদের ১৪ জনকে নিয়ে তিনি সচিবের সঙ্গে দেখা করেন।
সচিব মহোদয় বলেছেন, ‘আপনারা সরকারের উপর আস্থা রেখে চলে যান’, দায়িত্বহীনের মত কথা। আমরা সচিবকে বলেছি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেন। তখন উনি (সচিব) বলেছেন, ‘আপনারা চলে যান আমরা চেষ্টা করব।’ উনার কথার আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি, চলে এসেছি।
ডলার জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সাক্ষাতের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন সচিব সোহরাব।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কেউ এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করেননি জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পাওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন না। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের মূল বেতন সরকার দিয়ে থাকে। নিজ নিজ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে সংসদ সদস্যদেরও সুপারিশ থাকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে কয়েকটি শর্ত দিয়ে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে আলাদা বরাদ্দ রাখা হবে বলে বাজেটের আগে জানিয়েছিলেন তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
কিন্তু বাজেটে এমপিও নিয়ে কোনো ঘোষণা না থাকায় আমরণ অনশনে বসেন নন-এমপিও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যে গতবছর ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিওভুক্তির কার্যক্রম দ্রুত শুরুর কথা সংসদে জানান।
সেদিন তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সারাদেশে এক হাজার ৬২৪টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। অবশিষ্ট নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করতে ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা ২০১৮’ জারি করা হয়েছে। ওই নীতিমালা অনুসরণ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে দুটি কমিটি করার কথাও সেদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন।
পরে ১১ জুলাই জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারিক আলী ও ড. সারওয়ার আলী অনশনস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাসের কথা শিক্ষকদের সামনে তুলে ধরেন এবং পানি পান করিয়ে শিক্ষকদের অনশন ভাঙান।
সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে নতুন করে অবস্থান কর্মসূচিতে বসা একজন শিক্ষক শুক্রবার বলেন, আমরা সন্তুষ্ট চিত্তে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলাম, ক্লাস নিতে শুরু করেছিলাম। এর মধ্যে নির্বাচন গেল, কিন্তু অজানা কারণে আজও আমাদের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হল না। সরকারের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগও করল না।
রাজবাড়ী পাংশার সেনগ্রাম মহিলা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষিকা মোমেনা খাতুন বলেন, ২০০৩ সালে তাদের প্রতিষ্ঠানটি চালু হয়। বর্তমানে সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের। গত বছর ২০ জন দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে। প্রতি বছরই আমাদের শতভাগ পাস করে। কিন্তু মাদ্রাসা থেকেও কোনো টাকা আমরা পাই না। এই অবস্থায় আমরা ১৭ জন শিক্ষক মানবেতর জীবনযাপন করছি।
শিক্ষক প্রতিনিধিরা জানান, অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে অসুস্থ হয়ে পড়ায় শৈলেন চন্দ্র মজুমদার নামে পঞ্চাশ বছর বয়সী একজন শিক্ষককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের শাহবাগ জোনের পরিদর্শক (পেট্রোল) আবুল বাশার জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শিক্ষকরা রাস্তায় অবস্থান করছেন। ফলে প্রেসক্লাবের পূর্বপাশের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে।