November 26, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

এবার বিমানে আসছে পেঁয়াজ

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

নানামুখী উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর পেঁয়াজ পরিস্থিতি সামালে এখন বিমানে করে এই খাদ্যপণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝিতে মিশর ও তুরস্ক থেকে বিমান যোগে পেঁয়াজ ঢাকায় পৌঁছাবে বলে আশা করছেন বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দিন।

তিনি বলেন, বাজারের এই পরিস্থিতিতে সরকার মিশর ও তুরস্ক থেকে বিমানযোগে পেঁয়াজ আনার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী সপ্তাহের সোম অথবা মঙ্গলবার এই পেঁয়াজ দেশে এসে পৌঁছাবে। তারপর টিসিবির মাধ্যমে সারা দেশে ব্যাপকভিত্তিতে পেঁয়াজ বিপণন করা হবে।

ঢাকার পাইকারি বাজারগুলোতে শুক্রবার ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ২২০ টাকা থেকে ২৩০ টাকায়, মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায়, আর মিশর-তুরস্কের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায়।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানার পর থেকে প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা হারে বাড়ছে। পাইকারির সঙ্গে পাল­া দিয়ে প্রতিদিনই খুচরায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এদিন খুচরায় সর্বোচ্চ ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজের কেজি। অস্বাভাবিকভাবে দাম বৃদ্ধির জন্য পেঁয়াজের সরবরাহ ঘাটতির কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা।

সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর আমদানি করতে নতুন দেশ খুঁজতে শুরু করে বাংলাদেশ। এরপর ৬৬ হাজার ১৬২ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র (এলসি) খোলা হলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ এসেছে মাত্র ছয় হাজার টনের মতো। এই পরিস্থিতিতে অন্যদের ওপর নির্ভরতা বাদ দিয়ে সরকারিভাবেই পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে বলে বাণিজ্য সচিব জানান।

তিনি  বলেন, এই প্রথম সরকার নিজ উদ্যোগে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে। পরিস্থিতি এখন সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে। নতুন পেঁয়াজ আসার আগ পর্যন্ত এবং সমুদ্র পথে পেঁয়াজ আসার আগ পর্যপ্ত এভাবে চালিয়ে নেওয়া হবে।

শুধু মিশর তুরস্ক নয়, ইউক্রেইন, আফগানিস্তানসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে বিমান যোগে পেঁয়াজ আনতে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিদিন কী পরিমাণ পেঁয়াজ আসবে এবং দাম কত হবে, সে বিষয়টি এখনই পরিষ্কার করতে চাননি তিনি।

পেঁয়াজের দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিদেশ থেকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আমদানি, আগধু চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান, খোলা বাজারে সুলভমূল্যে বিক্রিসহ নানা উদ্যোগের কথা উলে­খ করে বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দিন বলেন, এরপরেও বাজার পরিস্থিতি সন্তোষজনক করা যায়নি। এই ক্ষেত্রে কেবল সরকারের ব্যর্থতা নয়, বরং বিশ্ববাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো বিষয় কাজ করেছে। তবে এই মুহূর্তে ওই সব বিশ্লেষণ করে লাভ নেই।

শুক্রবারের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শ্যামবাজারের আমানত ভান্ডারের পরিচালক মানিক বলেন, বাজারে মিয়ানমার কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের পেঁয়াজের সরবরাহ একেবারেই কম। সেই কারণে দাম কমানোর কোনো উদ্যোগ কাজে আসছে না। সরবরাহ বাড়াতে না পারলে এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।

মিরপুরের রূপনগরের একটি মিনি সুপার শপের পরিচালক মাসুদ বলেন, তার এলাকায় মুদি দোকানগুলোতে পেঁয়াজের সংগ্রহ ‘নেই বললেই চলে’। গতকাল তিনি ১৮০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন। কিন্তু রাতে বাজার বেড়ে যাওয়ায় তিনিও ২১০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হন। শুক্রবার মিরপুর পাইকারি বাজারে এসে দেখেন সেই পেঁয়াজই পাইকারিতে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফরিদপুর থেকে ঢাকায় পেঁয়াজ সরবরাহকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলার হাটগুলোতে পেঁয়াজের সরবরাহ একেবারেই নেই। যেখানে আগে প্রতি হাটে একশ থেকে দেড়শ বস্তা পেঁয়াজ উঠত সেখানে এখন উঠছে ১০ থেকে ১৫ বস্তা। একজন গৃহস্থ এক বস্তা পেঁয়াজ নিয়ে এলে পাইকাররা তাকে ঘিরে ধরছেন। ফলে এমনিতেই দাম লাফিয়ে বাড়ছে।

শুক্রবার ফরিদপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজবাড়ীসহ ওই এলাকার হাটগুলোতে এক মণ পেঁয়াজ সাড়ে ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছিল বলে জানান সরবরাহকারীরা।

 

 

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *