এফআর টাওয়ার মালিক, রূপায়ন প্রধানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারকে ২৩ তলা পর্যন্ত বাড়াতে নকশা জালিয়াতির অভিযোগে ভবন মালিক, নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ন গ্র“পের চেয়ারম্যান এবং রাজউকের সাবেক দুই চেয়ারম্যানসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কমিশনের উপ-পরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক মঙ্গলবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দুটি দায়ের করেন বলে সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান। গত ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৭ নিহত হওয়ার পর এই ভবন নির্মাণে নানা অনিয়মের বিষয়গুলো বেরিয়ে আসতে থাকে।
এই ভবনের জমির মূল মালিক ছিলেন প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুক। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভবনটি নির্মাণ করে রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিমিটেড। সে কারণে সংক্ষেপে ভবনের নাম হয় এফআর টাওয়ার।
অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি নকশা অনুমোদনে বিধি লঙ্ঘন এবং নির্মাণের ক্ষেত্রে ত্র“টি বিচ্যুতির জন্য রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এফ আর টাওয়ারের ১৮ তলার নকশা অনুমোদন করা হয়েছিল বিধি লঙ্ঘন করে। তার ওপরে আরও পাঁচটি ফ্লোর নির্মাণের নকশাকে বৈধতা দিতে বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি হয়। ত্রুটি ও নিয়মের বত্যয় ছিল ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রেও।
দুদকের করা এক মামলায় রাজউকের ভুয়া ছাড়পত্রের মাধ্যমে এফআর টাওয়ারকে ১৯ তলা থেকে বাড়িয়ে ২৩ তলা করা, উপরের ফ্লোরগুলো বন্ধক দেওয়া ও বিক্রি করার অভিযোগে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এফআর টাওয়ারের মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, রূপায়ন গ্র“পের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল, এফ আর টাওয়ার ওনার্স সোসাইটির সভাপতি কাসেম ড্রাইসেলের এমডি তানভীর-উল- ইসলামের নাম রয়েছে এ মামলার আসামির তালিকায়।
এছাড়া রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান কে এ এম হারুন, সাবেক সদস্য মো. রেজাউল করিম তরফদার, সাবেক পরিচালক মো. শামসুল আলম, বর্তমান তত্ত¡াবধায়ক মো. মোফাজ্জল হোসেন, সহকারী পরিচালক শাহ মো. সদরুল আলম, সাবেক প্রধান ইমারত পরিদর্শক মো. মাহবুব হোসেন সরকার, সাবেক ইমারত পরিদর্শক মো. আওরঙ্গজেব সিদ্দিকি, সহকারী অথোরাইজড অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক তত্ত¡াবধায়ক জাহানারা বেগম, সহকারী পরিচালক মেহেদউজ্জামান, নিন্মমান সহকারী মুহাম্মদ মজিবুর রহমান মোলা ও অফিস সহকারী মো. এনামুল হককেও আসামি করা হয়েছে এ মামলায়।
এছাড়া বিসিএসআইআরের সদস্য (অর্থ) মুহাম্মদ শওকত আলী, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুলাহ আল বাকি, গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ নাজমুল হুদা এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামছুর রহমানও এ মামলার আসামি।
এই ২০ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির সাতটি ধারায় এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন- ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অপর মামলাটি করা হয়েছে এফআর টাওয়ারের ১৫ তলা পর্যন্ত নির্মাণের ক্ষেত্রে ইমারত বিধিমালা লঙ্ঘন এবং নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮ তলা পর্যন্ত বাড়ানোর অভিযোগে।
এ মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে এফআর টাওয়ারের মালিক ফারুক এবং রূপায়নের মুকুলও আসামি। বাকি তিনজন হলেন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ূন খাদেম, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান ও সাবেক অথরাইজড অফিসার সৈয়দ মকবুল আহমেদ।
এই মামলায় দণ্ডবিধির চারটি ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। ১৯৯০ সালে পনের তলা ভবন নির্মাণের জন্য রাজউক থেকে অনুমতি নেয় এফআর টাওয়ার কর্তৃপক্ষ। পরে সেই একই নকশা দেখিয়ে ১৯৯৬ সালে ১৫ তলার জায়গায় ১৮ তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেওয়া হয়।
দুদকের মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ওই অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টিও ছিল ‘অবৈধ’। এফআর টাওয়ার পরে ২০০৩ সালে রূপায়ন হাউজিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে। সেই চুক্তি অনুযায়ী নির্মিত হয় ১৮ তলা ভবন। একই বছর রূপায়নের সঙ্গে সম্পূরক চুক্তি করে এফআর টাওয়ার। সেখানে ভবনটি ২৩ তলায় উন্নীত করতে সম্মত হয় দুই পক্ষ।
এজাহারে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের জন্য রাজউকের এস্টেট শাখা থেকে কোনো দরপত্র দেওয়া হয়নি। কোন ধরনের নকশা বা বিলও অনুমোদন করা হয়নি।