এফআর টাওয়ারের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বললেন পূর্তমন্ত্রী
বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর ঘটনাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলছেন, বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সুপারিশ যারা বাস্তবায়ন করেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার।
শুক্রবার আগুনে পোড়া এফআর টাওয়ার পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার কাছে মনে হয়েছে এটা তাদের গাফিলতির কারণে… দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যাকাণ্ড।”
মন্ত্রী বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না তিনি যত প্রভাবশালীই হোন, বৃত্তে, ক্ষমতায়, পদপদবীতে তিনি যেই হোননা কেন। অতীতের মত করে নয় কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকার বনানীর ২২ তলা এই ভবনে বৃহস্পতিবার দুপুরে আগুন লেগে চারটি তলা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; অন্তত ১৯ জন নিহত এবং অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হন। অবশ্য পুলিশের হিসাবে নিহতের সংখ্যা ২৫ জন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালযয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বৃহস্পতিবার জানান,অনেকগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থাকলেও এই ভবনে অগ্নি নির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। যেটুকু ছিল, সেগুলোও কার্যকর ছিল না বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ৩২ নম্বর হোল্ডিংয়ে ফারুক নামে এক ব্যক্তির জমিতে এই বাণিজ্যিক ভবনটি তৈরি করে রূপায়ন গ্রুপ। ভবন নির্মাণে অব্যবস্থাপনা নিয়ে তাদের কারও বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর যে বিষয়গুলোর উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়ে আসছে, সেগুলোর অভাব দেখা যায় এফআর টাওয়ারেও।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, “আমরা দেখেছি এফআর টাওয়ার নির্মাণে নকশায় গাফিলতি ছিল। রাজউকে এর নকশা অনুমোদনে কোনো নিয়মের ব্যতয় হয়েছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখব।”
১৯৯৬ সালে ১৮তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল জানিয়ে রেজাউল বলেন, ২০০৫ সালে (রাজউকে) কপি দাখিল করা হয় ভবনটি ২৩ তলা হয়েছে। সেটা নিয়ে সন্দেহ হওয়ার কারণে তদন্ত করা হয়, তদন্তে দেখা যায় যে কপিটা দাখিল করা হয়েছে তার সমর্থনে রাজউকে কোনো রেকর্ড নেই।
“ফলে তদন্তে রিপোর্টে ধরে নেওয়া হয় পরে যে নকশাটা তারা দাখিল করেছে তা ঠিক নয় এবং মূল অনুমোদিত নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সময় রাজউকের যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন এবং যারা কর্মকর্তা ছিলেন আমরা চেষ্টা করছি তাদের খুঁজে বের করতে।”
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি ভবন অনুমোদন প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে কি না, হয়ে থাকলে কারা কারা জড়িত সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ডেভেলপার, মালিক এমনকি আমাদের সংস্থার যদি কেউ জড়িত থাকে তার সম্পর্কে রিপোর্ট দেবেন, রিপোর্ট দেওয়ার পরপরই আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
“প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ- যেই হোন না কেন, যত শক্তিশালী ব্যক্তিই হোন না কেন এই জাতীয় মর্মান্তিক ঘটনা যে নরপিশাচরা টাকার লোভে ঘটায় তাদেরকে সর্বোচ্চ আইনের আওতায় এনে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার দ্রুত তা গ্রহণ করব।”