এফআর টাওয়ারের তাসভীর ও ফারুক রিমান্ডে
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই ভবনের দুই মালিক বিএনপি নেতা তাসভীর উল ইসলাম ও প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুককে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
তাসভীর ও ফারুকের জামিন আবেদন নাকচ করে ঢাকার মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী রোববার এই আদেশ দেয়। গত ২৮ মার্চ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ২৩ তলা ওই ভবনে আগুন লেগে ২৬ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ।
১৮ তলার অনুমোদন নিয়ে ভবনটি ২৩ তলা করা হয়েছিল এবং অগ্নি নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা সেখানে ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া শনিবার দুপুরে বনানী থানায় একটি মামলা হওয়ার কথা জানানোর পর রাতে বারিধারার থেকে তাসভীরকে এবং সুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ফারুককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বনানী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মিল্টন দত্তের দায়ের করা ওই মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।
‘অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে মানুষের জানমালের ক্ষতি করা, অবহেলার ফলে মৃত্যু সংঘটন, তাচ্ছিল্যপূর্ণ কার্যকলাপের ফলে অপরাধজনক অগ্নিকাণ্ডে মানুষের প্রাণহানি, মারাত্মক জখমসহ সম্পদের ক্ষতি’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে।
এফআর টাওয়ার যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে, সেই জমির মূল মালিক ছিলেন এস এম এইচ আই ফারুক। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভবনটি নির্মাণ করে রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিমিটেড। সে কারণে সংক্ষেপে ভবনের নাম হয় এফআর টাওয়ার।
আধাআধি ভাগ হলেও রূপায়ন পরে বিভিন্ন ফ্লোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেয়। এর মধ্যে ২১, ২২ ও ২৩ তলার মালিকানা রয়েছে প্রযুক্তি খাতের কোম্পানি কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের হাতে।
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি তাসভীর কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনিই ভবনের পরিচালনা কমিটির সভাপতি। রোববার দুপুরে তাদের তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. জালাল।
তিনি বলেন, ভবন নির্মাণে কী ধরনের ত্র“টি হয়েছে তা জানতে এবং পলাতক আসামি রূপায়ন গ্র“পের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলকে গ্রেপ্তার করার জন্য দুই আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। অন্যদিকে দুই আসামির পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা।
জমির মালিক ফারুকের পক্ষে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আইনজীবী গাজী শাহ আলম, আবদুলাহ আর মনসুর রিপন ও তুহিন হাওলাদার বলেন, তাদের মক্কেল জমির স্বত্ত¡ ত্যাগ করে ডেভেলপার কোম্পানিকে আমমোক্তারনামা দিয়েছিলেন। সেখানে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তার দায়িত্ব ফারুকের না।
এই আইনজীবীরা দাবি করেন, রূপায়নের সঙ্গে ১৮ তলা পর্যন্ত নির্মাণেরই চুক্তি হয়েছিল রূপায়নের। কিন্তু রূপায়ন যখন ১৮ তলার বেশি নির্মাণ করল, তখন তিনি বিষয়টি লিখিতভাবে রাজউককে জানান, একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন।
গাজী শাহ আলম বলেন, “যারা দোকান কিনেছেন তারাও ওই ভবনের মালিক, আমার মক্কেলও ওই ভবনের কিছু অংশ পান। ভবনের অষ্টম তলায় একটি গ্যাসের লাইন ছিল, ওই তলাতেই আগুনের সূত্রপাত। অষ্টম তলার মালিক আমার মক্কেল না।”
তাসভীরের পক্ষে আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, মামলায় যেসব ধারা যুক্ত করা হয়েছে তার একটিও তার মক্কেলের বিরুদ্ধে খাটে না। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নাকচ করে দুই আসামিকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
গ্রেপ্তার দুই আসামিকে আদালতে হাজির করার আগে পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আব্দুল বাতেন। তিনি বলেন, নির্মাণ ত্র“টি, অননুমোদিত স¤প্রসারণ, জরুরি নির্গমণ পথ না থাকা, পর্যাপ্ত ‘স্মোক ডিটেক্টর’ ও অগ্নি নির্বাপণ সরঞ্জাম না থাকায় এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
“আসামি ফারুক, তাজভীরুল ইসলাম ও লিয়াকত আলী খান মুকুলের অবহেলা ও উদাসীনতার বহু জীবনের নাশ এবং সম্পদের ধ্বংস হয়েছে। এফ আর টাওয়ারকে তারা শুধু অর্থ উপার্জনের কারখানা হিসেবে বিবেচনা করেছে এবং নিরাপত্তা, মানবিকতা ও সেবার দিকটি উপেক্ষা করা হয়েছে।”
বাতেন বলেন, ফারুক জমির মালিক ও পঁয়তালিশ শতাংশ অবকাঠামোর মালিক। আর তাসভীরুল ইসলাম ‘অবৈভাবে নির্মিত’ অংশের মালিক। মামলার অপর আসামি রূপায়ন গ্র“পের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল পলাতক রয়েছেন জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তাকে ধরতে অভিযান চলছে। তদন্তে যারা যারা দোষী হবে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”