এন্টিবডি টেস্ট অনুমোদন করেছে এফডিএ, এন্টিজেন নয়
র্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) তাদের দেশে তৈরি তিন থেকে চারটি র্যাপিড এন্টিবডি টেস্ট কিটের অনুমোদন দিয়েছে। তবে র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টিং কিট এখনও কোথাও আবিষ্কৃত হয়নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এন্টিবডি ও এন্টিজেন টেস্ট কিট বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান তিনি।
অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে দুই রকমের টেস্ট রয়েছে, একটি হচ্ছে ভাইরাস ডায়াগনোসিস করার টেস্ট, আরেকটি আমার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কতটুকু সেই টেস্ট। এই ডায়াগনস্টিক টেস্টের মধ্যেও দুই ধরনের টেস্ট রয়েছে। একটি ওয়েট টেস্ট এবং ড্রাই টেস্ট।
‘ল্যাবরেটরিতে যন্ত্রপাতি সেটআপ করে যে টেস্ট করা হয় সেটা হচ্ছে ওয়েট টেস্ট। আরেকটা হচ্ছে কোনো কার্টিজ, কিট বা পেপার দিয়ে যেগুলো করা হয় সেগুলো হচ্ছে ড্রাই টেস্ট। যেমন প্রেগনেন্সি টেস্ট, ডায়াবেটিস টেস্ট ওয়েট টেস্ট এবং ড্রাই টেস্টেও করা যায়। ড্রাই টেস্ট হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে র্যাপিড টেস্ট। ডায়াগনস্টিক টেস্টেরও র্যাপিড টেস্ট রয়েছে, আবার ইমিউন স্ট্যাটাসেরও ওয়েট টেস্ট আছে। যখন ডায়াগনস্টিক টেস্ট করছি তার মধ্যেও আবার কয়েক ধরনের টেস্ট রয়েছে। যার একটা হচ্ছে নিউক্লিক অ্যাসিড।’
তিনি বলেন, আরএনএ পরীক্ষা অর্থাৎ সরাসরি ভাইরাসটি পরীক্ষা করে দেখা। ভাইরাসটিকে দেখতে হলে নিউক্লিক অ্যাসিড দেখতে হবে। আরএনএ পরীক্ষার সবচেয়ে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে হাই থ্রু পুট সিকোয়েন্সিং। আরএনএ সিক্যুয়েন্সার যেহেতু অনেক উন্নতমানের ল্যাব ছাড়া করা যায় না তাই এর চেয়ে একটু সহজ নেক্সট গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে আরটিপিসিআর। এটাও ল্যাববেজড টেস্ট।
‘আবার অনেক সহজেই প্রেসার কুকার এবং টোস্টার মেশিনের সমান টেবিলের উপর রেখে ৫ মিনিটে পজিটিভ আর ১৫ মিনিটে নেগেটিভ টেস্ট করা যায়। এটাকে পয়েন্ট অব কেয়ার বলে। ড্রাই টেস্টগুলোর মানে হচ্ছে পয়েন্ট অব কেয়ার অথবা হোম ইউজ। এই টেস্টগুলো আসাতে আমেরিকায় যে কেউ ইচ্ছা করলে ফার্মেসিতে গিয়ে এখন টেস্ট করাতে পারে। এগুলো হচ্ছে নিউক্লিক অ্যাসিড টেস্টের অবস্থান। নিউক্লিক অ্যাসিড টেস্টের প্রতিদিনই কিছু না কিছু ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে কত সহজে কত কম পয়সায় করা যায়।’
বিশিষ্ট এ চিকিৎসাবিদ আরও বলেন, করোনা ভাইরাস কিছু প্রোটিনের আবরণ তৈরি করে। লিকুইড মেমব্রেনে চার ধরনের প্রোটিন তৈরি হয়। পাশাপাশি নন স্ট্রাকচারাল কিছু প্রোটিন তৈরি হয়। এই প্রোটিন থেকেও ভাইরাসকে আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা চলছে। করোনা ভাইরাস ব্লাডে খুব কম প্রবেশ করে। ব্লাড থেকে এই ভাইরাসের আরটিপিসিআর সেন্সিভিটি এক শতাংশও না।
‘ভাইরাস থেকে কিছু প্রোটিন ব্লাডে প্রবেশ করে এটাকেই বলা হয় এন্টিজেন। ব্লাডে ভাইরাসের উপরের সারফেসে যে প্রোটিন আছে সেই প্রোটিন এন্টিবডি তৈরি করে। অর্থাৎ প্রোটিনকে রিকগনাইজ করলে ব্লাডের বিভিন্ন রকম প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি হচ্ছে এন্টিবডি। কোনো টেস্টের সেন্সিভিটি কত তার মানে হচ্ছে কত কম ভাইরাসকে আমরা ডিটেক্ট করতে পারছি। স্পেসিফিক টেস্ট করলে শুধু ওই ভাইরাসকেই ডিটেক্ট করবে, অন্য ভাইরাসকে শনাক্ত করবে না। টেস্ট মানে হচ্ছে আমরা স্পেসিফিকভাবে ভাইরাস শনাক্ত করতে হবে। সুতরাং এন্টিবডি বা এন্টিজেন টেস্ট করার সময় কতটা প্লট রিঅ্যাকশান বন্ধ করছি তা দেখতে হবে।
‘এন্টিজেনের সময় আমাকে আগে ভাইরাসকে আইন্ডেন্টিফাই করতে হবে। ভাইরাসের এন্টিজেন এর ডিটারমিনার কী এসব বিস্তারিত জানতে হবে। তাহলে কারেক্টলি শনাক্ত করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, টেকনোলজি ডেভেলপ করে আমি একটি প্লেটে করলাম, না পেপারের করলাম, র্যাপিড করলাম এগুলো হচ্ছে প্রযুক্তি, আর ভাইরাসে প্রোটিনের চরিত্র কী, সে কয়দিনে আসে, এন্টিবডি কয়দিনে তৈরি হয়, সিকোন্সিং করা এগুলো হচ্ছে বিজ্ঞান। এন্টিজেনের ডিটারমিনের পুরো রহস্য উন্মোচন হয়নি। মাত্র কিছু কিছু জার্নাল আসতে শুরু করেছে।
‘সুতরাং আসল টেস্ট হচ্ছে ওয়েট টেস্ট এবং ল্যাবরেটরিবেজড টেস্ট। ইতোমধ্যে তিন চারটা কোম্পানিকে এফডিএ অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে পরীক্ষার। আমেরিকা, ভারতে র্যাপিড টেস্টিং কিট ব্যবহারে ফলস নেগেটিভ এবং ফলস পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে। ফলে চায়নার তৈরি এসব কিট ব্যবহার বন্ধও করেছে। তবে এগুলো কিটের দোষ না। এগুলোর সঙ্গে দুর্নীতি জড়িত। র্যাপিড টেস্ট রেজাল্ট কম্প্রোমাইজ করে। নিউইয়র্কে নিজেদের তৈরি কিটের অনুমোদন দিয়েছে এফডিএ। জার্মানে তারা নিজেরা ইন্টারনাল ভ্যালুয়েশন করে ব্যবহার করছে। অনেক দেশ নিজেদের এন্টিবডি টেস্ট কিট তৈরি করছে। বাণিজ্যিকভাবেও হয়তো চলে আসবে। তবে আমার পরামর্শ হচ্ছে প্রথমে ল্যাব বেজড টেস্ট করা। ল্যাবে টেস্ট করলে নতুন কোনো কিট এলে, তখন দ্রুত সেটাকে তুলনামূলকভাবে পরীক্ষা করে স্ট্যান্ডার্ড মিলিয়ে দেখা যায়।