এনু-রুপনের টাকা ‘গুণতে গুণতে’ মামলায় দেরি
পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগ নেতা দুই ভাই এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়ার বাড়িতে সিন্দুকভরতি টাকা উদ্ধারের একদিন পর মামলা হচ্ছে।
টাকা গুণতে সময় লাগছে বলে মামলা করতে এই দেরি বলে জানিয়েছেন র্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তারা।
এনু ও রুপন বন্দি থাকার মধ্যে মঙ্গলবার সকালে পুরান ঢাকার লালমোহন সাহা স্ট্রিটের তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সিন্দুকের মধ্যে থরে থরে সাজানো ২৬ কোটি টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধারের কথা জানায় র্যাব।
বুধবার রাতে ওয়ারী থানায় খবর নিতে গেলে কর্মকর্তারা বলেন, র্যাব বাদী হয়ে এনু ও রুপনকে আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মুদ্রা ও স্বর্ণ পাচারের অভিযোগ এনে মামলাটি করছেন।
মামলায় দেরির বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-৩ এর কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার আবু জাফর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “থানা পুলিশ টাকা আবার গুনে বুঝে নিতে মামলায় বিলম্ব হচ্ছে।”
ওয়ারী থানার ওসি আজিজুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “র্যাবের লোকজন থানায় রয়েছেন। এত টাকা গোনা ছাড়া আসল-নকলও চেক করা হচ্ছে।”
এনু গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও রুপন একই কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। পরে তাদের বহিষ্কার করা হয়।
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে ওয়ান্ডারার্সে অভিযান চালিয়ে জুয়ার সরঞ্জাম, কয়েক লাখ টাকা ও মদ উদ্ধার করে র্যাব তার সঙ্গে এনু-রুপনের সম্পৃক্ততা পায়।
এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর গেণ্ডারিয়ায় প্রথমে এনু ও রুপনের বাড়িতে এবং পরে তাদের এক কর্মচারী এবং তাদের এক বন্ধুর বাসায় অভিযান চালিয়ে পাঁচটি সিন্দুকভর্তি প্রায় ৫ কোটি টাকা, আট কেজি সোনা এবং ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব।
গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে এনু ও রুপমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। তার আগে দুদক তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে।
গ্রেপ্তারের দেড় মাস পর লালমোহন স্ট্রিটে মমতাজ ভিলা নামে ওই ছয়তলা বাড়ির নিচতলায় সোমবার মধ্যরাত থেকে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলমের নেতৃত্বে চলে অভিযান। পরে মেশিন এনে টাকা গোণা শেষ করতে মঙ্গলবার বেলা ১টা বেজে যায়।
পরে র্যাব-৩ অধিনায়ক রাকিবুল হাসান বলেন, নিচতলার ওই বাসায় পাঁচটি সিন্দুকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা এবং ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সোনার গহনা পাওয়া গেছে প্রায় এক কেজি।
যেসব বিদেশি মুদ্রা পাওয়া গেছে তার মধ্যে আছে ৯ হাজা্র ৩০০ মার্কিন ডলার, ১৫৪ মালয়েশীয় রিঙ্গিত, ৫ হাজার ৩৫০ ভারতীয় রুপি, ১ হাজার ১৯৫ চায়নিজ ইয়েন, ১১ হাজার ৫৬০ থাই বাথ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ১০০ দিরহাম।
তখন র্যাব কর্মকর্তা রাকিবুল বলেছিলেন, “এই অর্থ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র এখন আমরা থানায় হস্তান্তর করব। পরে সেখান থেকে নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয়ে যাবে।”
গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বরের অভিযানের সময় র্যাব বলেছিল, এনু-রুপনের বাড়ির সিন্দুকে পাওয়া টাকার উৎস ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো। টাকা রাখতে জায়গা বেশি লাগে বলে কিছু অংশ দিয়ে সোনা কিনে রাখতেন এনু।
ওই ঘটনার পর মোট সাতটি মামলার করা হয়, যার মধ্যে অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়া পরিচালনা ও অর্থ-পাচারের অভিযোগে চারটি মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।