এডিসি ও কনস্টেবলের মৃত্যু: এ পর্যন্ত যা জানা গেল
সময় এবং ঘটনাস্থল ভিন্ন হলেও অতিরিক্ত উপকমিশনার খন্দকার লাবণী আক্তার (৩৬) এবং তাঁর সাবেক দেহরক্ষী কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের আত্মহত্যা একই সূত্রে গাঁথা বলে ধারণা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এই দু’জনের মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডিজিটাল ডিভাইস ও তাদের কল রেকর্ড ধরে তদন্ত চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য মিলেছে।
৩০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা লাবণী খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ছুটিতে থাকা অবস্থায় গত বুধবার রাত ১টা ৩৫ মিনিটে মাগুরা জেলার শ্রীপুরের সারঙ্গদিয়া গ্রামের নানাবাড়িতে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় তাঁর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। অন্যদিকে কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান ছিলেন মাগুরা পুলিশ লাইন্সে কর্মরত। লাবণীর মৃত্যুর সাত ঘণ্টার মধ্যে মাহমুদুলও বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় পুলিশ লাইন্স ব্যারাকের ছাদে নিজ নামে ইস্যু করা অস্ত্র দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। বৃহস্পতিবার রাতেই ওই দু’জনের মরদেহ দাফন করা হয়।
ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, এডিসি লাবণী ও কনস্টেবল মাহমুদুলের আত্মহত্যার বিষয়ে তাঁরা কারণ অনুসন্ধান করছেন। ওই দু’জনের অসম একটা সম্পর্কের তথ্য তাঁরা জানতে পেরেছেন। পুরো বিষয়ে নিশ্চিত হতে ডিজিটাল ডিভাইস ও কল রেকর্ড ধরে তদন্ত চলছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে লাবণীর দেহরক্ষী ছিলেন মাহমুদুল। ওই সময় তাদের ঘনিষ্ঠতা হয়। লাবণীর স্বামী তারেক আব্দুল্লাহ বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিলেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। কনস্টেবল মাহমুদুলকে খুলনা থেকে বদলি করা হলে, তা ঠেকানোরও চেষ্টা করেছিলেন লাবণী। সম্পর্কের পরিণতির বিষয়ে হয়তো তাঁরা পরিষ্কার ছিলেন না। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য এবং ঝগড়া হয়েছে বলেও কিছু তথ্য রয়েছে।
ওই সূত্রটি জানায়, লাবণীর ব্যাংক কর্মকর্তা স্বামী অসুস্থ। কনস্টেবলের সঙ্গে একটা অসম সম্পর্ক- এসব নিয়েও তাঁর মধ্যে গভীর হতাশা ছিল, অস্বস্তি ছিল। স্বামীর দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিয়েও একটা অশান্তি ছিল। তার দুটি ছোট সন্তান রয়েছে। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও হতাশায় ছিলেন তিনি।
মাগুরার পুলিশ সুপার জহিরুর ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে এডিসি লাবণী ও কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের আত্মহত্যার বিষয়ে মাগুরা সদর ও শ্রীপুর থানায় দুটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তাঁরা এ আত্মহত্যার কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত শুরু করেছেন। পারিবারিক কলহ ও একই দিনে সাবেক দেহরক্ষী মাহমুদুল হাসানের আত্মহত্যার বিষয়সহ সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্তকাজ চলছে।
এডিসি লাবণী আক্তারের বাবা খন্দকার শফিকুল আজম বলেন, তাঁর মেয়ে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও হাসিখুশি মনের মানুষ ছিল। তার মতো মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে- এটা তিনি ভাবতেও পারছেন না। তবে স্বামী বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক তারেক আব্দুল্লাহর সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব খারাপ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো। বিশেষ করে অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে কলহ লেগেই থাকত। মূলত স্বামীর সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের জের ধরেই লাবণী আক্তার আত্মহত্যা করতে পারেন।
এদিকে কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের বাবা এজাজুল হক খান চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, তাঁর ছেলে খুব হাসিখুশি ও শান্ত মেজাজের ছিল। আত্মহত্যার পেছনে কী থাকতে পারে, এ বিষয়ে কোনো ধারণা করতে পারছেন না তিনি। তিনি বলেন, ছেলের ইচ্ছা ছিল সরাসরি সাব-ইন্সপেক্টর পদে চাকরি করার। সে জন্য লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিল।
লাবণীর স্বজনরা জানান, ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার রাতে লাবণীর মরদেহ মাগুরার বরালিদহ গ্রামের নিজ বাড়ির পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মাহমুদুলের স্বজনরা জানান, একই রাতে কুষ্টিয়ার পিপুলবাড়িয়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে মাহমুদুলের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।